প্রতীকী ছবি।
টাকা তুলতে এক প্রবীণ গ্রাহকের হয়রানি, মানসিক যন্ত্রণা এবং পরিষেবায় গাফিলতির জন্য ডাকঘরকে জরিমানা করল হুগলি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। শুভেন্দু মজুমদার নামে ওই গ্রাহকের করা মামলার রায়ে চুঁচুড়া মুখ্য ডাকঘরের পোস্টমাস্টার এবং রাজ্যের মুখ্য পোস্টমাস্টার জেনারেলকে ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দিনকয়েক আগের ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, অকারণ হয়রানি, মানসিক যন্ত্রণা এবং পরিষেবায় গাফিলতির জন্য ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। শুভেন্দুবাবুর মামলা চালানোর খরচ বাবদ আরও পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। এ জন্য ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
চুঁচুড়ার বাসিন্দা শুভেন্দুবাবু অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘ডাকঘরে গ্রাহকের সময়ের দাম না-দেওয়া অনেকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। আদালতের রায়ে বিষয়টি সুন্দর ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।’’
কী কারণে হয়রানি? শুভেন্দুবাবু জানান, ২০০৯ সালে তিনি এবং স্ত্রী শুক্লা মজুমদার যৌথ ভাবে চুঁচুড়া মুখ্য ডাকঘরে ১০ হাজার টাকার তিনটি কিসান বিকাশ পত্র (কেভিপি) কেনেন। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সেগুলি ‘ম্যাচিওর’ করে। সেই টাকা তুলতে তিনি ওই বছরের ২০ জুলাই ডাকঘরে যান। ঘণ্টা তিনেক লাইনে দাঁড়ানোর পরে কাউন্টারের কর্মী জানান, কেভিপির টাকা নগদে দেওয়া হয় না। ডাকঘরের সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। শুভেন্দুবাবু জানান, তাঁর ওই অ্যাকউন্ট নেই। স্ত্রীর ওই অ্যাকাউন্ট রয়েছে চুঁচুড়া মুখ্য ডাকঘরের অধীনস্থ প্রতাপপুর উপ-ডাকঘরে। তাতেই টাকা পাঠানো হবে বলে ডাকঘর জানায়।
তিন দিন পরে স্ত্রীর পাশবই নিয়ে শুভেন্দুবাবু মুখ্য ডাকঘরে যান। প্রায় তিন ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কেভিপি জমা দেন। কাউন্টারের কর্মী সেগুলি পরীক্ষা করে জানান, কেভিপির উপরে ডাকঘরের একটি নম্বর থাকে। শুভেন্দুবাবুর কেভিপিতে তা ছিল না। তিনি যেন পাশের কাউন্টার থেকে নম্বর লিখিয়ে আনেন। ওই দিন নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ায় শুভেন্দুবাবু বাড়ি ফিরে যান। এক দিন পরে নির্দিষ্ট কাউন্টারে কেভিপিতে ওই নম্বর লিখিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুরে কেভিপি জমা দেন। এ বার ডাকঘর কর্মী জানান, একটি নম্বর ভুল। শুভেন্দুবাবু ফের পাশের কাউন্টারে গিয়ে তা সংশোধন করে আনেন। বিকেলে মৌখিক ভাবে জানানো হয়, ‘ম্যাচিওরিটি’ বাবদ ৬০ হাজার টাকা শুক্লাদেবীর অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। শুভেন্দুবাবু ওই অঙ্ক পাশবইতে তুলে (আপডেট) দিতে বলেন। তাঁকে বলা হয়, মুখ্য ডাকঘরে তা হবে না। প্রতাপপুর উপ-ডাকঘর থেকে তিনি যেন এটা করিয়ে নেন। শুভেন্দুবাবু তখন পোস্টমাস্টারকে বলেন, পাশবই আপডেট না করলে বা এ সংক্রান্ত রসিদ না পেলে তাঁর কাছে প্রমাণ থাকবে না। একপ্রস্থ বচসার পরে তাঁকে কাঁচা রসিদ দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে শুভেন্দুবাবু পোস্টমাস্টার জেনারেলকে আরটিআই করলে সেখান থেকে জানানো হয়, ওই অঙ্ক পাশবইতে তুলে দেওয়া সংশ্লিষ্ট ডাকঘরের পরিষেবার অঙ্গ। এর পরেই শুভেন্দুবাবু মামলা করেন।
শুভেন্দুবাবুর আইনজীবী সুরজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার মক্কেলের বয়স ৬৪। তিনি হৃদরোগী। সামান্য একটা পরিষেবার জন্য তাঁকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডাকঘরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। গ্রাহকের প্রতি এই মনোভাবের বদল দরকার।’’
আদালতে ডাকঘর কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করেন। দাবি করা হয়, প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্য ওই দিন পাশবই আপডেট করা যায়নি। আদালতের পর্যবেক্ষণে অবশ্য ওই যুক্তি ধোপে টেঁকেনি। আদালতের বক্তব্য, কী ধরনের টেকনিক্যাল ফল্ট’, ডাকঘর তা ব্যাখ্যা করেনি। এর পরেই আদালতের মুখ্য বিচারক শঙ্করকুমার ঘোষ এবং সদস্য দেবী সেনগুপ্ত রায়ে চুঁচুড়া মুখ্য ডাকঘরের পোস্টমাস্টার এবং রাজ্যের মুখ্য পোস্টমাস্টার জেনারেলকে জরিমানার নির্দেশ দেন।