রাজ্যে সংক্রমণের হারও কিছুটা বেড়েছে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
চিন্তা বাড়াচ্ছে রাজ্যের করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যান। রোজ নতুন করে সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যাটা গত তিন-চার দিন ধরেই তিন হাজার ছুঁইছুঁই। শনিবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সেই সঙ্গে সংক্রমণের হারও গতকালের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। গত কয়েক দিন ধরেই রোজ পঞ্চাশের বেশি জন মারা যাচ্ছেন করোনার জেরে। শনিবারও মারা গিয়েছেন ৫১ জন। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ২ হাজার ৫।
শুক্রবারের তুলনায় শনিবার নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বেশি। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন দু’হাজার ৯৪৯ জন। এই বৃদ্ধির জেরে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯২ হাজার ৬১৫।
রাজ্যে করোনার জেরে মোট মৃত্যু দু’হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও গত পাঁচ দিনের তুলনায় মৃতের সংখ্যা আজ কমেছে। ৫ অগস্টে সংখ্যাটা ছিল ৬১। আজ তা কমে হয়েছে ৫১। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে করোনার বলি হলেন দু’হাজার পাঁচ জন। মৃতের সংখ্যার দিক থেকে রাজ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে কলকাতা, তার পর উত্তর ২৪ পরগনা ও হাওড়া।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
প্রতি দিন যত জন রোগীর কোভিড-টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যক রোগীর কোভিড-রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকেই বলা হয় পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। শনিবার প্রকাশিত বুলেটিনে রাজ্যে সংক্রমণ হার ১১.৭৩ শতাংশ। যা গত মাসের তুলনায় কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক। ১২-১৩ শতাংশ থেকে নেমে গত চারদিন ধরে সংক্রমণ হার ১১ শতাংশে বন্দি।গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ২৫ হাজার ১৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
তবে উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতেও আশার আলো দেখাচ্ছে আক্রান্তদের সুস্থ হয়ে ওঠা। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ইতিমধ্যেই ৬৫ হাজার ১২৪ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৭০.৩২ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
সংক্রমণ এবং মৃত্যু— দু’টি ক্ষেত্রেই রাজ্যে প্রথম কলকাতা। শুক্রবার কলকাতায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮৪ জন। রাজ্যে ৫১ জন মৃতের মধ্যে ২০ জনই কলকাতার বাসিন্দা। এই নিয়ে কলকাতায় মোট ৯২৭ জনের মৃত্যু হল।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
নতুন সংক্রমণের নিরিখে পিছিয়ে নেই উত্তর ২৪ পরগনাও। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৬৫৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ও মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। এর জেরে ওই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৩। অন্য দিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এ দিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ২৩২। মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। তবে হাওড়া ও হুগলিতে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ওই দুই জেলায় এ দিন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন যথাক্রমে ২১৭ ও ১৮৫ জন।
পশ্চিম বর্ধমানে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৭০। পূর্ব মেদিনীপুরে ১৪১, পূর্ব বর্ধমানে ৫৪, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৪১ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। এ ছাড়া দক্ষিণ দিনাজপুরে ৫৭, দার্জিলিঙে ৭৬, কোচবিহারে ৪০, জলপাইগুড়িতে ৮৭ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)