প্রতীকী ছবি।
নির্জন দ্বীপে নির্বাসনে যেতে হলে সঙ্গে কী কী নেবেন?
জবাবে তিন-চারটি গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রীর সঙ্গে পছন্দের বইয়ের নাম বলতে শ্লাঘা বোধ করেন বহু বাঙালিই। কলকাতায় দুনিয়ার সর্বাধিক ভিড়ের বইমেলার জন্যও গর্বের শেষ নেই। তবে গত অর্ধশতকে বিশ্বব্যাপী প্রবলতম সঙ্কটের আবহে বাঙালির অত্যাবশ্যক প্রয়োজনের তালিকায় খাতায়-কলমে স্বীকৃতি নেই কেতাবের। পাঠ্যবইয়ের অভাবে সমস্যা রয়েছে বাংলার পড়ুয়াদের একাংশের। একই সময়ে কেরলের মতো রাজ্য কিন্তু সপ্তাহে অন্তত দু’দিন বইয়ের দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে বাঙালি ও বইয়ের রসায়নকেও নতুন চোখে দেখতে শেখাচ্ছে করোনা-সঙ্কট।
জীবনে কোনটা অত্যাবশ্যক, সেই বিষয়ে ব্যক্তিভেদে ভাবনাচিন্তায় বিস্তর ফারাক। ক্যালিফর্নিয়ায় গঞ্জিকাকে আবশ্যক জ্ঞান করেন অনেকে। ফ্রান্স উৎকর্ষ খাদ্য ও সুরা ছাড়া বাঁচার কথা ভাবেই না। জার্মানি বা ফ্রান্স বইকেও কম গুরুত্ব দেয় না। লকডাউনের মুখে বার্লিনে বই কেনার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। কেরলেও দুই মলয়ালম চিত্রতারকা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বিপুল বই কিনে শিরোনামে আসেন। বইয়ের দোকান খোলার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্রীয় মুখপাত্র কটাক্ষ করায় কেরলের এক আমলা খোঁচা দেন, চকলেট কিনতে পারলে বই নয় কেন?
আরও পড়ুন: কে অভুক্ত, সাইকেলে ঘুরে খোঁজ মনসুরের
লকডাউনে বাঙালিকে মদের জন্য হাহাকার করতে দেখা গিয়েছে। মিষ্টির জোগানেও সে উল্লসিত। তবে বইয়ের দাবি বঙ্গে জোরালো ভাবে উঠতে দেখা যায়নি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, “কলেজ স্ট্রিট খুললেও লোকে যাবে কী করে?” একাদশ শ্রেণি ছাড়া স্কুলপাঠ্য বই পড়ুয়ারা মোটামুটি পেয়েছে। মন্ত্রীর মতে, আইসিএসই-সিবিএসই-র বই দেওয়াটা সংশ্লিষ্ট বোর্ডেরই মাথাব্যথা। এর বাইরে এ সঙ্কটে পছন্দের বই কেনার ‘বিলাসিতা’ আপাতত গুরুত্ব পাচ্ছে না মন্ত্রীর অভিধানে। বুকসেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে-ও অসহায়, “লোকে চাইলেও কী করে বই বিক্রি করব? কর্মীরা কী ভাবে আসবেন? পারস্পরিক দূরত্বেরই বা কী হবে?”
আরও পড়ুন: সাম্প্রদায়িক সংঘাতের প্রেক্ষিত ‘ভারতবর্ষ’ গল্প
এ-সব যুক্তি উপেক্ষার প্রশ্ন নেই। তবু গুরুত্বের মাপে বাঙালির একটা মানসিক ধাঁচ যে ফুটে উঠছে, তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কবি জয় গোস্বামীর কাছে বই ওষুধের মতো জরুরি। তিনি বলেন, ‘‘খাবার, জরুরি সরঞ্জামের সঙ্গে বাড়িতে বই পৌঁছনোর সুবিধা থাকলে লাভ হত। বই মানসিক শক্তি জোগায়। আনন্দও দেয়। এই সঙ্কটে তা খাটো করার নয়।” স্টিফেন হকিংয়ের লেখা দুনিয়া পাল্টে দেওয়া পাঁচ জন অতিমানব বিজ্ঞানীর কথা এখন পড়ছেন, ভাল ভাবে বুঝতে ঘনঘন তাঁর বিজ্ঞানী বন্ধুদের ফোনও করছেন জয়। অষ্টপ্রহর হরেক তথ্য নখদর্পণে থাকলেও বইয়ের আশ্রয় ক’জনের জীবনে অক্ষুণ্ণ, সেটাও ভাবাচ্ছে এই করোনায়িত বিশ্ব।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)