মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ঘোষণায় প্রথম দিনের আর্থিক প্যাকেজকে ‘বিগ জ়িরো’ বলে আখ্যা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নবান্ন থেকে তাঁর পাল্টা তোপ, ‘‘আশা ছিল, রাজ্যগুলির জন্য কিছু ঘোষণা হবে। কিছুই নেই। কোভিড পরিকাঠামো তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ নেই। অসংগঠিত ক্ষেত্র, ক্ষুদ্র শিল্প, বাজেট নিয়ন্ত্রণ আইন শিথিল করার প্রশ্নেও কিছু বলা হয়নি। এটা জ়িরো, জ়িরো, জ়িরো। অশ্বডিম্ব, আইওয়াশ, ধোঁকা, ভাঁওতা ছাড়া কিছু নয়।’’
ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও। তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘২০ লক্ষ কোটির আর্থিক প্যাকেজ মানুষকে ভুল বোঝাতে ঘোষণা করা হয়েছে। আসলে এই প্যাকেজের মাধ্যমে জিডিপি’র মাত্র ২% অর্থ মানুষের হাতে পৌঁছবে।’’
কী ভাবে? অর্থমন্ত্রী জানান, ২০ লক্ষ কোটির মধ্যে লুকিয়ে আছে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বাজারে টাকা জোগানোর ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বঘোষিত ৮.০৪ লক্ষ কোটির প্যাকেজ। গত ৬ ফেব্রুয়ারি, ২৭ মার্চ এবং ১৭ ও ২৭ এপ্রিল— চার দফায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই প্যাকেজ ঘোষণা করে। লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় তা ঋণের মাধ্যমে বাজারে পৌঁছয়নি। সরকার সেই টাকা আর্থিক প্যাকেজের মধ্যে ধরেছে।
আরও পড়ুন: গ্রামবাংলার অর্থনীতির জাগরণ ঘটাতে নতুন প্রকল্প ঘোষণা মমতার
লকডাউন ঘোষণার পরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নিজে ফের ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটির আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেন। সেটাও প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজে ধরা আছে। অমিতের ব্যাখ্যা, এই দু’টি ধরলে ৯ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা সরকার আগেই ঘোষণা করে দিয়েছে। যা ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের চলতি মূল্যহারে জিডিপি’র ৪.৮%। বাকি রইল ১০.২৬ লক্ষ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্র ৪.২ লক্ষ কোটি টাকা চলতি বছরে বাজার থেকে ধার করার সর্বোচ্চ সীমা ধার্য করেছে। যা জিডিপি’র ২%। অমিতের দাবি, আদতে জিডিপি’র ওই মাত্র ২% টাকাই কেন্দ্র খরচ করছে। মুখ্যমন্ত্রী তার সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘অমিতদা জনধনের ১০ হাজার কোটি টাকা ধরেননি। ওটা ধরলে জিডিপি’র জ়িরো, জ়িরো, জ়িরো শতাংশের প্যাকেজ হয়েছে। পুরোটা ভাঁওতা।’’
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘রাজ্যকে টাকা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি, কর্মসংস্থান কী ভাবে হবে বলা হয়নি, বাজারে চাহিদা বাড়ানোর কথা বলা হয়নি, বাড়তি অনুদানের কথা নেই, কোভিডের মোকাবিলার টাকা নেই। এমনিতেই রাজ্যে না হলেও দেশে মন্দা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ঘোষণার পর যে কী হবে, কেউ জানে না।’’
মুখ্যমন্ত্রী ব্যাখ্যা দেন, কেন্দ্র সারা দেশের ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের জন্য তিন লক্ষ কোটির প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। অথচ শুধু পশ্চিমবঙ্গেই ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে ৯০ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়। তা হলে সারা দেশের সাপেক্ষে ৩ লক্ষ কোটি টাকা কী এমন বড় ব্যাপার?’’
প্রধানমন্ত্রী দেশকে আত্মনির্ভর করার যে ডাক দিয়েছেন, সে প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আত্মনির্ভরতার কথা শুধু বললে হয় না, আমরা হয়েছি! বাংলা স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে এখানকার ক্ষুদ্রশিল্প, স্বনির্ভর দলের মাধ্যমে উৎপাদন করেছে ৭.১ লক্ষ পিপিই, ৪৫ লক্ষ মাস্ক, ২.৫ লক্ষ লিটার স্যানিটাইজার। এর ফলে ১৩.২ লক্ষ কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। আগামী ১৫ দিনে আরও ৮.৫ লক্ষ কর্মদিবস তৈরি হবে। স্থানীয় উৎপাদনের জন্য ৩০-৫০% খরচও কম হয়েছে।’’