বন্দে ভারত মিশন-এ বিদেশ থেকে ফিরছেন ভারতীয়রা। —ফাইল চিত্র
ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে কলকাতায় আসার একটিও উদ্ধারকারী উড়ান কেন দ্বিতীয় বন্দে ভারত মিশন-এ নেই, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে দেশের বিমানমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী জানিয়েছেন, চলতি মাসের শেষে প্রায় ৫০ হাজার ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনা হবে। অথচ সেই তালিকায় রাজ্যের মানুষের সংখ্যা মেরেকেটে ৩০০ জন! এটাকেই কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বঞ্চনা হিসেবে দেখছেন বিদেশে আটকে থাকা এ রাজ্যের বহু মানুষ।
যে প্রক্রিয়া ৭ মে শুরু হয়েছে, তার অধীনে ১৭৯ জন যাত্রীকে নিয়ে কলকাতায় প্রথম উড়ান আসে গত ১৮ মে ঢাকা থেকে। এ ছাড়াও আগামী ২৯ মে আরও দুটি উড়ানের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। একটি আসবে শ্রীলঙ্কা থেকে, অন্যটি মায়ানমার থেকে। বিদেশে আটকে থাকা বাঙালিদের বড় অংশের প্রশ্ন, ইউরোপ, আমেরিকাতে তো তুলনায় অনেক বেশি বাঙালি আটকে। তা হলে সেখান থেকে কলকাতায় উদ্ধারকারী উড়ান না দিয়ে কেন ইয়াঙ্গন ও কলম্বো থেকে উড়ান দেওয়া হল। তাঁদের প্রশ্ন, ইউরোপ, আমেরিকা এমনকি পশ্চিম এশিয়ায় আটকে পড়া বাঙালিদের থেকে কি ইয়াঙ্গন, কলম্বোতে আটকে পড়া বাঙালিদের সংখ্যা বেশি? এ ছাড়াও বন্দে ভারত মিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ে দুবাই থেকে সরাসরি এবং আমেরিকা থেকে মুম্বই ঘুরে ভুবনেশ্বরের উড়ানও রয়েছে। অথচ কলকাতার উড়ান নেই। প্রশ্ন, তবে কি বিদেশে আটকে থাকা ওড়িশাবাসীর সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের থেকেও বেশি?
২৯ তারিখের এই দুটি উড়ান নিয়ে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে। ঠিক হয়েছে মুম্বই থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার উদ্ধারকারী বিমানটি প্রথমে যাবে ইয়াঙ্গন। সেখান থেকে যাত্রীদের তুলে সে কলকাতায় নেমে এখান থেকে মুম্বই উড়ে যাবে। দ্বিতীয় উড়ানের ক্ষেত্রে ঠিক হয়েছে, মুম্বই থেকে বিমান যাবে কলম্বো। সেখান থেকে যাত্রীদের নিয়ে প্রথমে সেটি মুম্বইতে ফিরবে। সেখান থেকে ভুবনেশ্বর ছুঁয়ে আসবে কলকাতায়। অভিযোগ, এই রুট
থেকেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে উড়ান দুটি মূলত চালানো হচ্ছে আটকে পড়া মুম্বইবাসীদের জন্য। সে ক্ষেত্রে সমালোচনার ঝড় সামলাতে কলকাতার কিছু বাসিন্দাকে তুলে নিয়ে এ শহরে নামিয়ে দেওয়া হবে। বলা হবে, “এই তো কলকাতার উড়ান রয়েছে।” কেন সরাসরি উড়ান নয়? বিমান মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “কলম্বো বা ইয়াঙ্গনে এত সংখ্যক পশ্চিমবঙ্গবাসী আটকে নেই যার জন্য সেখান থেকে কলকাতায় সরাসরি উড়ান চালাতে হবে।”
বিমান মন্ত্রককে জিজ্ঞাসা করলেই বলা হচ্ছে, বিদেশ থেকে কারা আসবেন, তাঁরা কোন শহরে যাবেন তা পুরোটাই ঠিক করছে বিদেশ মন্ত্রক। বিমান মন্ত্রক শুধু চাহিদা মতো উড়ানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
প্রথম দফার উদ্ধারকারী উড়ানে কলকাতার নামই ছিল না। কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, বিদেশ থেকে ফিরতে চাওয়া এত সংখ্যক রাজ্যবাসীকে নিভৃতবাসে জায়গা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো পশ্চিমবঙ্গের নেই বলে জানানো হয়েছে। রাজ্যের দাবি, দ্বিতীয় দফার উদ্ধারকারী উড়ানসূচি তৈরি হওয়ার আগেই রাজ্যের তরফ থেকে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে পরিকাঠামো প্রস্তুত বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপরেও দ্বিতীয় তালিকায় প্রথমে কলকাতার নাম রাখা হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টুইটারে সমালোচনার ঝড় আছড়ে পড়ার পরে প্রথমে ঢাকা, পরে ইয়াঙ্গন ও কলম্বোর উড়ান দেওয়া হয়েছে।