পাঁশকুড়া মেচগ্রামে বড়মা হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র
করোনা আক্রান্তের নিরিখে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘হটস্পট’ তালিকায় রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। জেলার এগরা, তমলুক ও হলদিয়া এলাকায় করোনা আক্রান্তের হদিস মিলেছে। তবে করোনা আক্রান্তদের অধিকাংশ চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠায় সাফল্যও এসেছে। এর জন্য রাজ্য সরকারের তরফে ঘোষিত ‘রেড জোন’ থেকে ‘অরেঞ্জ জোন’-এ যাওয়ার পথে এই জেলা। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের তরফে জেলার সাফল্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তবে তার স্বীকৃতি মিলতে চলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) কাছ থেকেও।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার করোনা আক্রান্তদের অধিকাংশের চিকিৎসা হচ্ছে পাঁশকুড়ার মেচগ্রামে করোনা হাসপাতালে। আজ, সোমবার ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে আসার কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি দলের। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘পাঁশকুড়া করোনা হাসপাতালে জেলার করোনা আক্রান্তদের অধিকাংশই ইতিমধ্যে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এই করোনা হাসপাতালে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার সাফল্যের হার খুব বেশি। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে জেলার সাফল্য তুলে ধরেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি দল সোমবার পাঁশকুড়া করোনা হাসপাতাল পরিদর্শনে আসবেন বলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। তাঁরা হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার পরিকাঠামো ও চিকিৎসার পদ্ধতি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেবেন।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনিক সূত্রে খবর, জেলার করোনা আক্রান্তদের প্রথম দিকে কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পাঠানো হলেও পরবর্তী সময়ে রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা মেনে পাঁশকুড়ার মেচগ্রামে বড়মা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে করোনা হাসপাতাল চালু করা হয়। পরবর্তীসময়ে জেলার চণ্ডীপুর মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেও করোনা হাসপাতাল চালু হয়েছে। মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় সাফল্যের পাশাপাশি নতুন করে সংক্রমণ ঠেকানো বড় চ্যালেঞ্জ। তাই জেলার সর্বত্রই বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা চালিয়ে করোনার উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের খোঁজ করা শুরু হয়েছে। করোনা উপসর্গ থাকলেই তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র মিলিয়ে মোট ৯টি জায়গায় নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এমন সাফল্য কী ভাবে!
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, সমন্বয়, পরিকাঠামো, সঠিক পথ্য আর মনোবলের জোরেই এই সাফল্য। পরপর করোনা আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করে এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের মনোবল এখন তুঙ্গে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পাঁশকুড়া মেচগ্রামের বড়মা হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ২২০ টি। আইসিইউ ২২ টি। ভেন্টিলেটর ১০টি। ঝাঁ চকচকে হাসপাতালে প্রতি ওয়ার্ডে রোগীদের প্রতিটি শয্যার দূরত্ব অন্তত ১০ থেকে ১২ ফুট। বড়মা হাসপাতালের নিজস্ব ১৬ জন চিকিৎসক ও নার্স ছাড়াও স্বাস্থ্য দফতর সেখানে পর্যাপ্ত ডাক্তার ও নার্স নিযুক্ত করে। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের দেওয়া হয় পিপিই সহ সমস্ত রকমের সুরক্ষা সরঞ্জাম। স্বাস্থ্য দফতররের দাবি, বড়মা হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও নার্সরা খুব কাছ থেকে রোগীদের উপযুক্ত পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা করেছেন। শুধু তাই নয়, করোনা আক্রান্ত রোগীর পথ্য কী হবে সে বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে সেই মতো পথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেন। এখনও পর্যন্ত ১৪ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে ১০ জন সুস্থ হয়ে ফিরেছেন এখান থেকে। বাকিরাও ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠার পথে।
বড়মা হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তা ও চিকিৎসক মধুমিতা রায় বলেন, ‘‘রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে পাঁশকুড়া ব্লক ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকা ছিল ইতিবাচক।’’ হাসপাতালের ভিতরে ও বাইরে প্রতিটি মুহূর্তে জীবাণুমুক্ত করার জন্য নিযুক্ত রয়েছেন ৬০ জন কর্মী।’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘এটা আমাদের কাছে সত্যিই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। ওই হাসপাতাল করোনা হাসপাতাল হবে শুনে প্রথমে অনেক চিকিৎসক ও নার্স কাজ করতে চাননি। তাঁদের বুঝিয়ে পুরো টিম নিয়ে আমরা কাজে নেমে পড়ি। নির্দিষ্ট ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, মনোবল বৃদ্ধি প্রভৃতির উপরে আমরা জোর দিয়েছিলাম। ফলও পেয়েছি হাতেনাতে। এখন আমাদের মন থেকে করোনা চিকিৎসার ভয় একেবারেই উড়ে গিয়েছে। রোগীরাও ভরসা পেয়েছেন।’’