রাজারহাটের কোয়রান্টিন সেন্টারে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রের করোনা-পর্যবেক্ষক দলের জন্য আর কিছু করার নেই বলে বৃহস্পতিবার স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘যা সহযোগিতা করার, আমরা করেছি। ওঁরা এলাকা দেখতে চেয়েছিলেন, দেখানো হয়েছে। স্বাস্থ্যসচিবের কাছে প্রেজ়েন্টেশন চেয়েছিলেন। তা-ও করা হয়েছে। যা তথ্য দেওয়ার দেওয়া হয়েছে। এর পর আর কিছু আমাদের তরফে দেওয়ার নেই। কেন্দ্রীয় দল এর পর তথ্য চাইলে ই-মেল করবেন। পাঠিয়ে দেব।’’
কলকাতায় থাকা কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলটি এ দিন প্রথমে যায় রাজারহাটের কোয়রান্টিন সেন্টারে। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের শিক্ষা স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। সুপারের সঙ্গে আলোচনা সেরে এক ঘণ্টা ধরে হাসপাতাল পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকেরা। সেখান থেকে তাঁরা যান এম আর বাঙুর হাসপাতালে। সেখানেও ঘণ্টাখানেক ছিলেন তাঁরা। সূত্রের খবর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে তাঁদের রোগীদের কাছে যাওয়ার নিয়ে আপত্তি করেন। কেন্দ্রীয় দল জোরাজুরি করলে শেষ পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয়। বাঙুরে আইসোলেশন ওয়ার্ড, আইসিসিইউ ঘুরে দেখেন তাঁরা। ওই হাসপাতালের পাশের বাড়িতে করোনা পজ়িটিভ এবং উপসর্গ থাকা রোগীরা ভর্তি রয়েছেন। সেখানে মর্গেও যায় পরিদর্শক দল।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বাঙুরে কত ভেন্টিলেটর রয়েছে, পরীক্ষার জন্য দিনে কত নমুনা পাঠানো হচ্ছে, সেখানে কত জন মারা গিয়েছেন, দেহ কী ভাবে সৎকার হচ্ছে ইত্যাদি একগুচ্ছ প্রশ্ন করেন প্রতিনিধিরা। রোগীদের কাছ থেকে জানতে চান, তাঁরা বিদেশে গিয়েছিলেন কি না। কোথা থেকে তাঁদের সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে।
আরও পড়ুন: কড়া চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর, পত্র-যুদ্ধে রাজ্যপালও
সম্প্রতি সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে বাঙুর হাসপাতালের হল ঘরে রোগীদের পাশে শয্যায় মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। সেই ভিডিয়োর সত্যতা অবশ্য আনন্দবাজার যাচাই করেনি। সূত্রের খবর, এ দিন সেই ভিডিয়োর উল্লেখ করে পর্যবেক্ষকেরা জানতে চান, কী ভাবে এমন ছবি প্রকাশ পেল? ভিডিয়োটি ওই হাসপাতালের কিনা, তা-ও তাঁরা মিলিয়েও নেন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের একাংশের দাবি, রাজারহাট ও বাঙুরের পরিকাঠামো, করোনা নিয়ন্ত্রণের হাল দেখে খুশি নন পর্যবেক্ষকেরা। যদিও মুখ্যসচিবের দাবি, কেন্দ্রীয় দলের তরফে তাঁকে ঘরোয়া ভাবে বলা হয়েছে কোভিড হাসপাতালে সব কিছু প্রোটোকল মেনেই করা হচ্ছে। কলকাতায় লকডাউনের চেহারাও ভাল। তবে লিখিত রিপোর্ট না-আসা পর্যন্ত তিনি এ নিয়ে ধন্দেই আছেন বলে জানান মুখ্যসচিব।
আরও পড়ুন: করোনা নিয়ে রটনার জেরে একঘরে স্বাস্থ্যকর্মী
উত্তরবঙ্গের দলটি এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়া আবাসন কমপ্লেক্সে গিয়ে সেখানে কত জন থাকেন এবং খাবারের জোগান বিষয়ে খোঁজ নেয়।এর পরে দলটি যায় শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনের কাছে বাণীমন্দির স্কুলে পরিযায়ী শ্রমিকদের থাকার জায়গায়।
কিন্তু রাজ্য হাত গুটিয়ে ফেলার পরে কি আর এখানে থাকবে কেন্দ্রীয় দল? মুখ্যসচিবের জবাব, ‘‘আমরা ওঁদের ডাকিনি। ফলে ওঁরা থাকবেন, নাকি চলে যাবেন ওঁদের ব্যাপার। আমাদের আর কিছু বলার বা দেখানোর নেই। এখন বিএসএফ আর এসএসবি অতিথিশালায় ওঁরা রয়েছেন। চাইলে আরও সাত দিন ছু’টি কাটিয়ে যেতে পারেন।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)