Coronavirus in West Bengal

পদ্ধতি জটিল ছিল জানিয়ে বঙ্গে করোনার মোট তথ্য দিল নবান্ন

মুখ্যসচিবের দাবি, পরীক্ষাগার নিয়ে সমস্যা ছিল কিছু দিন। ত্রুটিপূর্ণ কিট এসেছিল। যা ফেরত যায়। তখন পরীক্ষা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২০ ০৩:৫১
Share:

ছবি পিটিআই।

কয়েক দিন ধরে করোনা-তথ্য নিয়ে চলা ‘বিতর্কে’ কার্যত ইতি টানল রাজ্য সরকার। সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যসচিব জানান, রাজ্যের করোনা-তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিতে কিছু ফাঁক ছিল। সহজে তথ্য পাওয়াও যাচ্ছিল না। পদ্ধতি সংশোধন করে মোট তথ্য জানানোর অবস্থায় এসেছে রাজ্য।

Advertisement

রাজ্য সরকার বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে করোনা-আক্রান্তের যে-সংখ্যা জানিয়েছিল, তা রাজ্যেরই মেডিক্যাল বুলেটিনে উল্লিখিত সংখ্যার চেয়ে বেশি ছিল। ফলে বিভিন্ন শিবিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তার পরে সরকারি বুলেটিনের ধরন বদলে যায়। এ দিন তারই ব্যাখ্যা দিয়ে মুখ্যসচিব জানান, সোমবার পর্যন্ত রাজ্যে মোট ‘কনফার্মড’ কোভিড-আক্রান্তের সংখ্যা ১২৫৯। তার মধ্যে অ্যাক্টিভ করোনা আক্রান্ত ৯০৮ জন। কোভিড-কারণে মৃত্যু হয়েছে মোট ৬১ জনের (কলকাতায় ৩৫, হাওড়ায় ১২, উত্তর ২৪ পরগনায় ১০ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, জলপাইগুড়ি ও কালিম্পঙে এক জন করে)। করোনার পাশাপাশি অন্য অসুখও (কো-মর্বিডিটি) ছিল, এমন মৃত ব্যক্তির সংখ্যা ৭২। মোট ১৩৩।

মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘আমরা স্পষ্ট করে দিচ্ছি, এত দিন আমরা অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা জানিয়েছিলাম। এ দিন থেকে মোট কেস দেব। কারণ, এটা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিভ্রান্তি থাকছে— কতটা অ্যাক্টিভ, কতটা টোটাল। গত কয়েক দিনে আমাদের স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে মোট সংখ্যা দেওয়া হয়নি। কারণ, দেখতে পেলাম তথ্যের সূত্র একটাই, স্বাস্থ্য দফতর। বেসরকারি-সরকারি পরীক্ষাগার এবং হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না, এক রকম তথ্য এক জায়গায়, আর একটা তথ্য অন্য জায়গায়— এই ফারাকটা হচ্ছে কেন। বলা হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমকে আর একটা তথ্য দেওয়া হচ্ছে। দেখলাম, রিপোর্টিং স্ট্রাকচারে সব চেয়ে বড় সমস্যা ছিল। সেই পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা ঘুরে যখন তথ্য পৌঁছত, তখন দেখা গিয়েছে, আমাদের পেশ করা বা বুলেটিনে দেওয়া তথ্যের পরে যে-কেসগুলো এসেছে, কিছু ক্ষেত্রে তা নথিভুক্তই হয়নি। এটা ইচ্ছাকৃত নয়। শুরুর ব্যবস্থাপনা ‘ফুলপ্রুফ’ বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু যে-কোনও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনশীল হওয়া প্রয়োজন। যা শিক্ষা পাচ্ছি, সেই অনুযায়ী সংশোধন করা দরকার। তাতে কয়েক দিন সময় লেগেছে। তাই আমরা মোট সংখ্যা দিতে পারিনি। কারণ, আমরা নিশ্চিত ছিলাম না, সব দিক থেকে দেখে কোনও তথ্য কোথাও পড়ে ছিল কি না। সব তথ্য বার করে এটা বলছি।’’

Advertisement

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মুখ্যসচিবের দাবি, পরীক্ষাগার নিয়ে সমস্যা ছিল কিছু দিন। ত্রুটিপূর্ণ কিট এসেছিল। যা ফেরত যায়। তখন পরীক্ষা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল। এখন ভাল ভাবেই করোনা-পরীক্ষা হচ্ছে। সেটা বাড়ছে। পরিস্থিতি সন্তোষজনক। প্রশাসন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু সরকারি হাসপাতাল থেকে ‘রিয়েল-টাইম’ তথ্য যত সহজে পাওয়া যাচ্ছে, বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তত নয়। ফলে ‘রিপোর্টিং’-এ ফাঁক থেকে যাচ্ছিল। আইসিএমআরের সঙ্গে রাজ্যের তথ্যের ফারাক কেন, সেই প্রশ্নও উঠেছিল। মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘স্পষ্ট করতে চাই, আইসিএমআরের তথ্য হল পরীক্ষা সংক্রান্ত। এক জন রোগীর একাধিক পরীক্ষা হয়ে থাকতে পারে। ল্যাবে পরীক্ষার মোট তথ্য দেয় আইসিএমআর। আমরা কেস রিপোর্ট করি। আমরা সব জায়গা থেকে তথ্য পেতে শুরু করেছি। কেন তথ্যে ফাঁক থাকল, তা বুঝেছি। এখন আমরা সব তথ্য রিট্রিভ করতে পেরেছি। তাই আপনাদের দিতে পারছি।’’

আরও পড়ুন: কন্টেনমেন্ট এলাকা বন্ধ, অন্যত্র দোকান খোলা ১০-৬টা

রবিবার পর্যন্ত রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছিল ৫০। এ দিন মুখ্যসচিব জানান, কোভিড-কারণে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬১। বিভিন্ন মহলের জল্পনা, কোভিড-কারণে মৃত্যু কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, বৃহস্পতিবার মৃতের সংখ্যা যেখানে ৩৩ ছিল, চার দিনে সেটা বেড়ে ৬১ হল কী ভাবে?

আরও পড়ুন: কোন জেলায় করোনা আক্রান্ত কত, মৃত কত, তালিকা দিল রাজ্য সরকার

মুখ্যসচিব ও স্বাস্থ্যসচিবের ব্যাখ্যা, বিশেষজ্ঞ কমিটি কোভিড-পজ়িটিভ আক্রান্তের ১০৫টি মৃত্যুর ঘটনা যাচাই করেছিল। তারা বলেছিল, তার মধ্যে ৩৩টি মৃত্যু সরাসরি কোভিড-কারণে। বাকি ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে কো-মর্বিডিটিতে (অন্য রোগ)। তাদের পরামর্শ নিয়েছে সরকার। মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘কমিটির নিশ্চিত সংখ্যার সঙ্গে আমরাও মৃতের সংখ্যা বলেছিলাম ৩৩। আস্তে আস্তে বেড়ে এখন তা হয়েছে ৬১। আপনারা একটা বিষয়কে যে-ভাবে দেখেন, আমরা সে-ভাবে দেখি না। কমিটি কাজ বন্ধ করেছে বলে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, এটা ঠিক নয়। কমিটির কাজের মধ্যে একটা বোঝার দিক ছিল। সেটা পূর্ণ হয়েছে। কমিটির পরামর্শ সকলেই মানছে এবং ডেথ সার্টিফিকেট লেখার ক্ষেত্রে আইসিএমআর প্রোটোকল মানা হচ্ছে। সার্বিক তথ্য আপনাদের দেখতে হবে। একটা-দু’টো তথ্য দেখলে চলবে না। এখন কো-মর্বিডিটিতে মৃত্যুর তথ্য হাসপাতালের কাছেই থাকছে। আমরা এখন শুধু কোভিড-মৃত্যুর তথ্য নিচ্ছি।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement