নিশ্চিন্তে: জীবন যেমন ঘোড়ামারায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
মুম্বই, কলকাতা, দিল্লির মতো এগিয়ে থাকা শহরগুলি যা পারেনি, করোনার সঙ্গে যুদ্ধে সেই দুরূহ কাজ করে দেখাল বাংলার প্রত্যন্ত দ্বীপ ঘোড়ামারা। প্রায় সাড়ে চার হাজার বাসিন্দার এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা এখনও পর্যন্ত করোনা ‘নেগেটিভ’। তবে আত্মতুষ্টিতে কোনও রকম শিথিলতা নেই কোথাও।
সংক্রমণ শুরুর ছয় মাস পরেও রাজ্য তথা দেশ যখন উদ্বেগমুক্ত হতে পারছে না, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন অঞ্চলের অন্তর্গত সাগর ব্লকের দ্বীপ ঘোড়ামারা তখন কার্যত পুরনো জীবনেই রয়েছে। সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে আমরা নজর রাখছিলাম। তবে দ্বীপের মানুষ এই অসাধ্য সাধন করেছেন। এই দ্বীপে কেউ আক্রান্ত হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য সরিয়ে আনাও কঠিন।’’
এই তথ্য জেনেও নিশ্চিন্ত নয় প্রশাসন। সাগরের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘তথ্য হিসেবে এটা ঠিক। তবে তার জন্য সতর্কতা ছেড়ে দিলে বিপদ হবে। দ্বীপের বড় অংশেই মানুষ মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন না। তাতে ঝুঁকি থেকেই যায়। আমরা নজর রাখছি।’’ ঘোড়ামারার এক বাসিন্দা করোনায় মারা গেলেও সে সময় তিনি দ্বীপের বাইরে ছিলেন।
কাকদ্বীপ থেকে জলপথে আধ ঘণ্টার রাস্তা ঘোড়ামারা। এখানকার মাইতিপাড়া, পাত্রপাড়া, মন্দিরতলা, বাগপাড়া, খাসিমারার কোথাও মাস্কের ব্যবহার নেই। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারও কম। ‘পুরনো স্বাভাবিকতা’য় রয়েছে এখানকার দৈনন্দিন জীবন। পঞ্চায়েত অফিস, রেশন দোকান, পোস্ট অফিস সর্বত্রই পরিবেশ আগের মতোই রয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্জীব সাগর বলেন, ‘‘আমরা প্রচার করেছি। তবে এখানকার মানুষ কাজে বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করছেন।’’
আরও পড়ুন: ‘অদক্ষদের’ দক্ষতা বাড়ানোই চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের
দ্বীপে হাসপাতাল দূরে থাক, এক জন চিকিৎসকও নেই! প্রয়োজনে একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রই ভরসা মানুষের। দু'জন সহায়ক আর আশা-কর্মীদের পরামর্শে চলছে এই দ্বীপের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। বিধায়ক অবশ্য বলছেন, পরিকাঠামো বাড়ানোর ব্যবস্থা চলছে। ঘোড়ামারা মিলন বিদ্যাপীঠের সভাপতি সুরজিৎ কর জানান, বহু যুবক অন্য রাজ্যে কাজে গেলেও সংক্রমণ শুরুর আগে সুস্থ অবস্থাতেই ফিরে এসে নিভৃতবাসে থেকেছেন।
আরও পড়ুন: নতুন বছরের গোড়ায় চূড়ান্ত চার্জশিট সারদায়?
বাইরে থেকে কাজে অন্য কারণে কেউ এলেও বেশি সতর্ক থাকছেন স্থানীয়েরা। ডায়মন্ডহারবার থেকে ঘোড়ামারায় বাপের বাড়িতে এসেছেন অর্পিতা মণ্ডল। সঙ্গী ছেলের মতো তাঁর মুখেও মাস্ক। বললেন, ‘‘বাইরে থেকে এলাম। তাই সাবধানতা।’’