প্রতীকী ছবি।
কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাই তার মোকাবিলায় শিশু-স্বাস্থ্যে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকার। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এখন থেকেই শিশুদের চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে বাড়তি যত্ন নিতে হবে। তাই শিশুদের শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মায়েদের স্বাস্থ্য ভাল রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাজ্যে সরকারি স্তরে শিশুদের সাধারণ শয্যার পাশাপাশি পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিকু) ১৩০০টি এবং নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (নিকু) ৩৫০টি শয্যা রাখা হবে।
স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা হচ্ছে। আবার প্রাপ্তবয়স্কদের যে ভেন্টিলেটর রয়েছে, তার কয়েকটির রূপান্তর ঘটানো হচ্ছে শিশু চিকিৎসার জন্য। কেনা হচ্ছে পেডিয়াট্রিক পালস অক্সিমিটার। সূত্রের খবর, বিশেষ প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করছে স্বাস্থ্য ভবন। জাতীয় স্তরের দুই জন এবং রাজ্য স্তরের ১১ জন বিশেষজ্ঞ শিশুচিকিৎসককে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি কমিটি। তাঁরা রাজ্যের শিশুচিকিৎসকদের প্রথমে প্রশিক্ষণ দেবেন। তার পরে ওই চিকিৎসকেরা সমস্ত সরকারি হাসপাতালের জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবেন। যাতে তাঁরা প্রাথমিক ভাবে করোনা আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা করতে পারেন।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, ইতিমধ্যে দু’কোটি প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। আরও ১৭ লক্ষ দেওয়া হবে। তবে টিকার জোগান কম থাকায় দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের কোথাও এ দিন ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকলকে অর্থাৎ সর্বজনীন টিকা দেওয়ার কর্মসূচি শুরু করা যায়নি। তবে রাজ্য জুড়ে ১৮-৪৪ বছর বয়সি সুপার স্প্রেডারদের টিকা দেওয়া হয়েছে। স্লট বুকিংয়ের মাধ্যমে টিকাকরণ শুরু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। এ দিন হোয়াটসঅ্যাপে ‘স্লট বুকিং’-এর মাধ্যমে খড়্গপুরের কয়েকটি পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে আসেন উপভোক্তারা। কিন্তু ওই কেন্দ্রগুলি স্লট বুকিংয়ের মাধ্যমে টিকা দেওয়ার জন্য নথিভুক্ত নয়। তাও যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের ফিরিয়ে না দিয়ে টিকা দেওয়া হয়েছে, জানান খড়্গপুর পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক সুতনুকা সাঁতরা। তিনি বলেন, ‘‘মহকুমা হাসপাতালে স্লট বুকিং থাকলেও সেখানে প্রতিষেধক খরচ হল না। অথচ আমাদের সেই প্রতিষেধক খরচ হল।’’
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত আট দফার ভোটের সময় রাজ্যে কোভিড সংক্রমণের হার ৩২% হয়েছিল। এখন তা কমে ৪% হয়েছে। তবে কলকাতা-সহ অনেক জেলায় এখন সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়ার সংক্রমণের হার কিছুটা বেশি। এ দিন রাজ্যের দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা নেমে এসেছে এক হাজারের ঘরে (১,৮৭৯ জন)। তবে উত্তর ২৪ পরগনায় এ দিনও ২৯৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। কমেছে মৃতের সংখ্যাও। এ দিন করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, উত্তরপ্রদেশ থেকে মৃতদেহ ভেসে আসায় জল দূষিত হচ্ছে। মালদহে এমন অনেকগুলি দেহ সসম্মানে সৎকার করা হয়েছে।