গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
ফের রেকর্ড দৈনিক করোনা-আক্রান্তের সংখ্যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃতের সংখ্যা কমলেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে অনেকটাই। বেড়েছে সংক্রমণের হারও। এই পরিসংখ্যানের জেরে নতুন করে দুশ্চিন্তায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।
স্বাস্থ্য দফতরের বৃহস্পতিবারের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৭২০ জন নতুন করে করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন। যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। বুধবার আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ হাজার ৬৭৭ জন।
দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধি হওয়ায় বেড়েছে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হারও। এ দিনের হিসেব অনুযায়ী, তা ৮.৭২ শতাংশ। গত কাল এই হার ছিল ৮.৬৪ শতাংশে। এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪২ হাজার ৬৫৩টি কোভিড টেস্ট হয়েছে। রাজ্যে প্রতি দিনের কোভিড টেস্ট এবং পজিটিভ রিপোর্টের নিরিখেই এই হার ওঠানামা করে। এই হার যত নিম্নমুখী হবে, ততই স্বস্তিদায়ক। প্রতি দিন যত জনের কোভিড টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত জনের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বলা হয়। তবে সোমবার ৮.৯৪ শতাংশের পর দিন কয়েক তা নিম্নমুখী হয়েছিল। কিন্তু এ দিন সংক্রমণের হার বাড়ায় স্বাভাবিক ভাবেই তা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
(গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখা যাবে)
উৎসবের মরসুম শুরুর আগে থেকেই রাজ্যবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলেছে প্রশাসন। তবে সে সমস্ত তোয়াক্কা না করেই গোটা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পুজোর কেনাকাটার ভিড় দেখা গিয়েছে। এই প্রবণতা না কমলে পুজোর পর সংক্রমণের জোয়ার আসতে পারে, তেমনটাই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
আরও পড়ুন: কোভিডের ফল জানা যাবে ৫ মিনিটেরও কম সময়ে, যন্ত্র বানাল অক্সফোর্ড
আরও পড়ুন: দাদাকে বাঁচাল টেস্ট টিউব বেবির অস্থিমজ্জা, ভারতে প্রথম
স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, এ দিন পর্যন্ত রাজ্যে করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩ লক্ষ ৯ হাজার ৪১৭। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২ লক্ষ ৭১ হাজার ৫৬৩ জন। ফলে রাজ্যে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৯৮৪।
(গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখা যাবে)
উৎসবের আগে সংক্রমণের হারে চিন্তা বাড়ানোর পাশাপাশি দৈনিক সুস্থতার হারও বিশেষ স্বস্তি দিচ্ছে না। গত কালের থেকে তা অতি সামান্য কমে হয়েছে ৮৭.৭৭ শতাংশ। গত কাল তা ছিল ৮৭.৭৯ শতাংশে। এ দিন সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ হাজার ১৭৯ জন।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার পাশাপাশি উদ্বেগ ছড়াচ্ছে কোভিড রোগীদের দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও। এ দিন রাজ্যে ৬২ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কলকাতায় সবচেয়ে বেশি ১৭ জন মারা গিয়েছেন। এ শহরের পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। ওই জেলায় ১৪ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, হাওড়ায় ৬, হুগলি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৪ জন করে রোগী মারা গিয়েছেন। পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩ জন করে রোগী মারা যান বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই সঙ্গে মালদহ ও মুর্শিদাবাদে ২ জন করে এবং দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, নদিয়া ও বীরভূমে ১ জন করে কোভিড-আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ৫ হাজার ৮৭০ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হল এ রাজ্যে।
(গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখা যাবে)
দৈনিক আক্রান্তের তালিকায় গোটা রাজ্যের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। এ শহরে এক দিনে ৭৮৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছে। এর পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা (৭৬৩)। এ ছাড়াও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে হাওড়া (২৭১), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (২১৬), হুগলি (১৪৪), পশ্চিম মেদিনীপুর (১৬৯), পূর্ব মেদিনীপুর (১১৭), নদিয়া (১৭৭), মালদহ (১১১) এবং দার্জিলিং (১১৬)। গত ২৪ ঘণ্টায় এই সব জেলাতেই ১০০ বা তার বেশি সংক্রমিতের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)