গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
শহর কলকাতার পুজো প্যান্ডেলগুলিতে যে ভাবে ভিড় বাড়ছিল, তাতে ‘করোনা-সুনামি’র আশঙ্কা করছিলেন প্রশাসন থেকে চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরা। সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট পুজো প্যান্ডলগুলিকে ‘নো এন্ট্রি জোন’ ঘোষণার নির্দেশ দিতে তাঁরা যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। তার মধ্যেও অবশ্য করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে কমতি নেই। ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যায় প্রতিদিন রেকর্ড পেরিয়ে যাওয়ার ধারা অব্যাহত সোমবারও। এ দিনও নতুন সংক্রমণ ৪ হাজার ছুঁইছুঁই। পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার অপরিবর্তিত। সুস্থতার হার সোমবার ফের কমে যাওয়ায় রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের উদ্বেগ আরও বাড়ছে। রবিবারই আবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন জানিয়েছেন, রাজ্যে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে করোনা নিয়ে ক্রমেই দুশ্চিন্তা বাড়ছে রাজ্য প্রশাসনের।
স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রকাশিত সোমবারের বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯৯১ জন। দৈনিক নতুন সংক্রমণের নিরিখে এটাই এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। রবিবার এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৯৮৩ জন। সোমবার পর্যন্ত রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ৩ লক্ষ ২৫ হাজার ২৮। এ দিনের বুলেটিনে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ নতুন করে কোভিড সংক্রমিত হয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়— ৮৫৮ জন। এক দিনে সংক্রমণের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে কলকাতা (৮০৯)।
(গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখা যাবে)
২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ৬৪ জনের। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট দু’দিন এই সংখ্যা রেকর্ড হয়েছে— গতকাল, রবিবার এবং তার আগে ১৪ অক্টোবর। সোমবারের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে কোভিডের বলি হয়েছেন ৬৩ জন। এই নিয়ে রাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৬ হাজার ১১৯। রবিবার ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনায়। দ্বিতীয় স্থানে ছিল কলকাতা। সোমবার উল্টো ছবি। কলকাতায় মারা গিয়েছেন ১৮ জন, উত্তর ২৪ পরগনায় ১০ জন।
আরও পড়ুন: ত্রাতা আদালত, অতিমারির মহাবিপর্যয় থেকে রেহাই কলকাতা ও বাংলার
গত ৬ অক্টোবর রাজ্যে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার কমতে কমতে নেমে গিয়েছিল ৭.৯৫ শতাংশে। তার পর থেকে ওই হার ফের বাড়তে শুরু করেছে। মাঝে এক-দু’দিন কমলেও মোটের উপর প্রবণতা ছিল বৃদ্ধির দিকে। ২৪ ঘণ্টায় যত জনের কোভিড টেস্ট করা হয় এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত জনের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তাকে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। রবিবার সেই সংক্রমণের হার পৌঁছে গিয়েছিল ৯.১৫ শতাংশে। সোমবারের বুলেটিন অনুযায়ী সংক্রমণের হার অপরিবর্তিত। রবিবার রাজ্যে ২৪ ঘণ্টায় কোভিড টেস্ট হয়েছিল ৪৩ হাজার ৫২০। সোমবার তা সামান্য বেড়ে হয়েছে ৪৩ হাজার ৬১৯। এই নিয়ে রাজ্যে এ পর্যন্ত মোট কোভিড টেস্টের সংখ্যা ৩৯ লক্ষ ৯১ হাজার ২৭০।
(গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখা যাবে)
আরও পড়ুন: শহরের জঙ্গলে ফিরে আসুক দামা আর বসন্ত বউরি পাখিদের ডাক
সুস্থতার হারেও সংক্রমণের নয়া প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এক সময় যে সুস্থতার হার রাজ্য প্রশাসনকে স্বস্তি দিচ্ছিল, এখন সেটাই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রবিবার সেই সুস্থতার ছিল ৮৭.৫৫ শতাংশ। এ দিন সেই হার আরও কমে হয়েছে ৮৭.৪৮ শতাংশ। সোমবারের বুলেটিন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে কোভিড চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ২৭২ জন। এই নিয়ে রাজ্যে মোট সুস্থ কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২ লক্ষ ৮৪ হাজার ৩২৫। এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৫৮৪।
(গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখা যাবে)
উদ্বেগের কারণ যে শুধু কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা নয়, তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে রাজ্যের অন্য জেলাগুলির পরিসংখ্যানেও। সোমবারের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ১০০ জনের বেশি নতুন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে এমন জেলাগুলি হল — হাওড়া (২২৯), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (২৩৪), পশ্চিম মেদিনীপুর (২২৩), নদিয়া (১৭৭), দার্জিলিং (১৫৬), হুগলি (১৫৪), পশ্চিম বর্ধমান (১২৯), মালদহ (১১৯), পূর্ব বর্ধমান (১১০) এবং জলপাইগুড়ি (১০৮)।