Coronavirus in West Bengal

আগের মানুষটি নেই, বলছেন কোভিড-জয়ীরা

গত মে মাসে ‘পোস্ট-কোভিড ট্রিটমেন্ট ফলো আপ ক্লিনিক’ চালু করেছিলেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:১২
Share:

ছবি পিটিআই।

কারও অল্প হাঁটলেই শুরু হয়ে যাচ্ছে শ্বাসকষ্ট। কেউ আবার চুল ওঠার সমস্যায় ভুগছেন। কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পরে শিরদাঁড়ায় ব্যথা শুরু হয় সরকারি হাসপাতালের নার্সের। আড়াই মাস পরেও সেই শারীরিক সমস্যা পিছু ছাড়েনি। বস্তুত, কোভিড পরবর্তী নানারকম শারীরিক জটিলতায় জর্জরিত বছর চল্লিশের নার্সের বক্তব্য, ‘‘আমি যে আগের মানুষটি আর নেই, তা বেশ বুঝতে পারছি!’’ সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও একাধিক সংক্রমিত রোগী বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার শিকার হচ্ছেন বলে বেলেঘাটা আইডি সূত্রে খবর।

Advertisement

করোনায় আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে কেমন আছেন, তা জানতে গত মে মাসে ‘পোস্ট-কোভিড ট্রিটমেন্ট ফলো আপ ক্লিনিক’ চালু করেছিলেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই ক্লিনিকের অভিজ্ঞতার নিরিখে কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।

গত ১৬ জুলাই কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজের সিস্টার-ইন-চার্জের করোনা ধরা পড়ে। সংক্রমণের শিকার হওয়ার দেড় মাস পরে সেই নার্স জানান, কর্মক্ষমতা কমে গিয়েছে। স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগে কর্মরত ৪৭ বছরের মহিলা বলেন, ‘‘একটু বাজারে গেলে হাঁপিয়ে যাচ্ছি। দুর্বলতা এখনও কাটেনি। অস্বাভাবিক ভাবে মাথার চুল উঠছে।’’ শহরের আর একটি মেডিক্যাল কলেজের বছর চল্লিশের নার্সিং স্টাফ জানান, সপ্তাহখানেক আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরে তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে হাঁপানি ছিল মহিলার। কিন্তু কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পরেও শ্বাসকষ্ট অন্য রূপ নিয়েছে। মহিলার কথায়, ‘‘উত্তেজিত হয়ে কেঁদে ফেললেও এখন দম বন্ধ হয়ে আসে। এটা আগে ছিল না। করোনা হওয়ার পরে শিরদাঁড়ায় একটা ব্যথা শুরু হয়েছে। শরীরের মধ্যে যে একটা বদল ঘটে গিয়েছে, তা বেশ অনুভব করছি।’’ সুস্থ হয়ে ওঠার সাড়ে তিন মাস পরে বছর বাহান্নের নিতাই চক্রবর্তীর অভিজ্ঞতা, ‘‘১০-১৫ মিনিট টানা হাঁটলেই কষ্ট হচ্ছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: মাস্ক-দূরত্ব ঠেকাতে পারে ৫ লক্ষ মৃত্যু

বেলেঘাটা আইডি’র বক্ষরোগের চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরী বলেন, ‘‘কোভিড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের পুরোপুরি সেরে উঠতে সময় লাগছে বেশি। হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের রোগী কোভিড নিউমোনিয়ার শিকার হলে আগে যতবার শ্বাসগ্রহণকারী যন্ত্রের সাহায্য নিতে হত তার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ কোভিড নিউমোনিয়ার শিকার হলে কাশি সারতে সময় লাগছে।’’ এই পরিস্থিতিতে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা খতিয়ে দেখতে পোস্ট কোভিড ক্লিনিকে পালমোনারি ফাংশন টেস্ট বা ডিএলসিও টেস্ট চালু করার পক্ষপাতী তিনি।

আরও পড়ুন: টিকা পেলেই সব সমস্যা মিটবে না, বার্তা সরকারকে

ফর্টিস আনন্দপুর হাসপাতালের বক্ষরোগের চিকিৎসক রাজা ধর জানান, আরটি-পিসিআরে নেগেটিভ হওয়ার পরে করোনা রোগীদের ফুসফুসে ফাইব্রোসিস হচ্ছে, সেই নজির রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ফুসফুসের কোষে রক্ত জমাট বাঁধায় রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া মাংসপেশীতে ব্যথা, ক্লান্তিভাব, হাত-পা ফোলার সমস্যাতেও রোগীরা ভুগছেন। এ সকল রোগীদের কথা মাথায় রেখে আমরাও পোস্ট কোভিড ক্লিনিক তৈরি করেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement