দৈনিক মৃতের পরিসংখ্যানের নিরিখে কলকাতার পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যে দৈনিক করোনায় সংক্রমণের হার ফের ঊর্ধ্বমুখী। এই নিয়ে টানা তিন দিন। যদিও কোভিডে আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থতার হার থেমে রইল একই জায়গায়। বঙ্গের করোনা-মানচিত্রে এই দুই পরিসংখ্যানের পাশাপাশি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনায় মৃতের দৈনিক সংখ্যাও। তবে সামান্য হলেও স্বস্তিদায়ক গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্তের পরিসংখ্যান।
স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত সোমবারের বুলেটিন অনুযায়ী, এ রাজ্যে কোভিডের জেরে সংক্রমণের হার ঠেকেছে ৮.৮৪ শতাংশে। স্বাস্থ্য দফতরের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ হাজার ৫৬ জনের কোভিড টেস্ট হয়েছে। প্রতি দিন যত জনের কোভিড টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত জনের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বলা হয়। এই হার যত নিম্নমুখী হবে, ততই স্বস্তিদায়ক। তবে স্বাস্থ্যকর্তাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে গত কয়েক দিন ধরেই এই হার ক্রমশ বাড়ছে। গত শনিবার এবং রবিবার তা ছিল যথাক্রমে ৮.৩৮ শতাংশ এবং ৮.৪৮ শতাংশ।
আসন্ন দুর্গাপুজোর বাজারে দূরত্ব বজায় রাখার যাবতীয় প্রশাসনিক সতর্কতা দূরে ঠেলে ভিড় দেখা গিয়েছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। স্বাস্থ্যকর্তাদের আশঙ্কা, সতর্কতা না মানলে দুর্গাপুজোর পর রাজ্যে করোনার সংক্রমণে বিপুল জোয়ার আসবে। এই মুহূর্তে গোটা রাজ্যে করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ লাখের কাছাকাছি।
(গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাওয়া যাবে।)
এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ ৯৮ হাজার ৩৮৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছে। তবে এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২ লক্ষ ৬২ হাজার ১০৩ জন। ফলে এই মুহূর্তে রাজ্য জুড়ে ৩০ হাজার ৬০৪ জন সক্রিয় কোভিড রোগী রয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৮৩। পাশাপাশি, ওই সময়ের মধ্যে ৩ হাজার ১৫৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৬৬ হাজার, সক্রিয় রোগী কমে ৮.৬১ লক্ষ
(গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাওয়া যাবে।)
আক্রান্তের তুলনায় সক্রিয় রোগীর সংখ্যা যথেষ্ট কম হলেও করোনায় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ফের এক বার চিন্তা বাড়াচ্ছে। গত কাল ৫৯ জন কোভিড রোগী মারা গেলেও এ দিন ফের তা ৬০-এর কোটা ছুঁয়েছে। এর মধ্যে কলকাতায় সবচেয়ে বেশি ১৯ জন সংক্রমিতের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। দৈনিক মৃতের পরিসংখ্যানের নিরিখে কলকাতার পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। ওই জেলায় এক দিনে ১৬ জন সংক্রিমতের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৮, মালদহে ৪, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩, হাওড়া এবং নদিয়ায় ২ জন করে রোগী মারা গিয়েছেন। এ ছাড়া, কোচবিহার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান এবং হুগলিতে ১ জন করে সংক্রমিতের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় মৃতের সংখ্যায় আশঙ্কা জাগালেও সুস্থতার হার গত কালের মতোই রয়েছে ৮৭.৮৪ শতাংশে।
আরও পড়ুন: বেড মিলল না, ৭ দিন এসএসকেএম চত্বরে পড়ে থেকে মৃত্যু শিশুর
(গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাওয়া যাবে।)
স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত করোনার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দৈনিক সংক্রমিতদের মধ্যে ৬০ শতাংশই হলেন কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলির বাসিন্দা। এ দিনের বুলেটিন জানিয়েছে, কলকাতাকে ছাপিয়ে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় ফের শীর্ষে উঠে এসেছে উত্তর ২৪ পরগনা। ওই জেলায় এক দিনে ৭৫৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭১৭ জন। এ ছাড়া, হাওড়ায় ২২৮, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২১৯, হুগলিতে ১৪৮, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৩৬, পূর্ব মেদিনীপুরে ১৭৩, পশ্চিম বর্ধমানে ১১৮, নদিয়ায় ১৬৯, দার্জিলিঙে ১০৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই জেলাগুলিতেই একশো বা তার বেশি রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)