কোনও রকম সতর্কতা অবলম্বন না করেই মানুষ মেতে উঠেছেন রঙের উৎসবে। রবিবার রামপুরহাটে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাজ্যের বেশির ভাগ জায়গাতেই পালন করা হল না কোভিড বিধি। দক্ষিণ থেকে উত্তরবঙ্গ — দোল এবং ভোট প্রচারে সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক চোখে পড়েনি।
সবচেয়ে আশঙ্কাজনক দৃশ্য দেখা গিয়েছে মায়াপুরে। এ দিন বাঁধনছাড়া ভিড় আছড়ে পড়ে মায়াপুর ইসকনে। কোভিড বিধি মানা দূরে থাক, ভিড়ের চেহারা দেখে মনে হয়নি করোনার আদৌ অস্তিত্ব আছে! ট্রেন এবং সড়ক পথে বহু মানুষ এসেছেন শহরে। নবদ্বীপ গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের সম্পাদক অদ্বৈত দাস মহারাজ বলেন, ‘‘শনিবারেও ভিড় ছিল না। রবিবার যে এত লোক আসতে পারেন আমরা ভাবতে পারিনি।’’ ইসকনের মুখপাত্র রমেশ দাস জানান, প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মন্দিরে এসেছিলেন।
বীরভূমে আট থেকে আশি, শামিল হয়েছিলেন দোলে। সেখানেও সচেতনতার কোনও ছবি চোখে পড়েনি। সিউড়ি, বোলপুর ও রামপুরহাটে বিভিন্ন সংগঠনের তরফে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়। তাতে ছিল গিজগিজে ভিড়। অধিকাংশের মুখে মাস্ক ছিল না। দূরত্ববিধিও শিকেয় উঠেছিল। রাজনৈতিক প্রচারেও করোনা বিধি মানা হয়নি।
হাওড়া জেলায় অবশ্য সচেতনতার ছবি দেখা গিয়েছে। রাস্তায় কোনও জমায়েত দেখা যায়নি। পুলিশের টহলদারি ছিল। মানুষ বাড়িতেই রঙ খেলেছেন। তবে প্রচার করেছেন প্রার্থীরা। তাঁদের কপালে রঙ দিয়েছেন ভক্তরা। প্রার্থীরাও পাল্টা আবির মাখিয়েছেন। কিন্তু তা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে যায়নি।
নদিয়ার শান্তিপুরের রাষ্ট্রীয় উদ্যানে বসন্ত উৎসবে কোভিড-বিধি মানার চিহ্ন দেখা যায়নি। এই প্রাঙ্গণেই রবিবার মুখোমুখি দেখা শান্তিপুরের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার এবং কংগ্রেস প্রার্থী ঋজু ঘোষালের। হল আবির বিনিময়ও। করিমপুরে পাড়ায়-পাড়ায় এবং পরিবারের মধ্যে দোল খেলা এ বার আগের তুলনায় বেশি হয়েছে। দু-একজন ছাড়া কারও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।
রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরে একাধিক এলাকায় বসন্ত উৎসব হয়েছে। কিন্তু প্রায় কোথাওই করোনা বিধি মানা হয়নি। এ দিন ঝাড়গ্রাম শহরের ঘোড়াধরা পার্কে জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাহাতোর উদ্যোগে আয়োজিত বসন্ত উৎসবেও অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না। সেখানেও সবাইকে মাস্ক পরতে বলা হয়েছিল বলেই দায় সেরেছেন উদ্যোক্তারা। একই ছবি দেখা গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরেও।
উত্তর ২৪ পরগনাতেও কোভিড বিধি মানতে দেখা যায়নি অধিকাংশ মানুষকে। বনগাঁ বসিরহাট এবং বারাসত মহকুমায় ছবিটা একই। পথে লোকজন অন্য বছরগুলির তুলনায় ছিল কম। বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী পীযূষ কান্তি সাহা কর্মী সমর্থকদের নিয়ে শোভাযাত্রা বের করেছিলেন। পথ চলতি মানুষ এবং দোকানিদের তাঁরা আবির মাখিয়েছেন। বসিরহাট শহরে, হিঙ্গলগঞ্জে শোভাযাত্রা বের হয়। গানের তালে নাচ করতে রং ও আবির খেলতে দেখা যায় কয়েকশো মানুষকে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জেলার অনেক প্রার্থী দোলের দিন সকালে রং খেলে প্রচার সারেন। পাড়ায় পাড়ায় রং খেলায়ও মাস্ক-দূরত্ববিধি ছিল না। তবে করোনা পরিস্থিতির জেরে একাধিক জায়গায় বসন্ত উৎসবের আয়োজন স্থগিত রাখা হয়।
হুগলির বিভিন্ন জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় তুলে দলবল নিয়ে দোল উৎসবে জনসংযোগে নেমেছিলেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে রঙ খেলায় অনেকটা নিয়ন্ত্রিত ভাব দেখা গিয়েছে। আবাসনের বাসিন্দারা নিজেদের চৌহদ্দিতে রঙ খেলেছেন।
করোনা-বিধি কার্যত উড়িয়ে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের জোড়বাংলা মন্দিরের সামনে শিশুদের সঙ্গে আবির মাখেন তৃণমূল প্রার্থী অর্চিতা বিদ। মাধবগঞ্জের মদনগোপাল মন্দিরের সামনে কর্মীদের সঙ্গে গেরুয়া আবিরে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বড়জোড়া, পাত্রসায়র-সহ দক্ষিণ বাঁকুড়ার খাতড়া, তালড্যাংরা, ইঁদপুরেও দেখা গিয়েছে কম-বেশি একই ছবি। পুরুলিয়ায় যদিও ভিড় এড়িয়ে রং খেলায় মাতেন মানুষজন। দোল উৎসব ঘিরে আবির খেলা, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দূরত্ব-বিধি মানার চেষ্টা চোখে পড়েছে।
মালদহ থেকে আলিপুরদুয়ার, উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই রবিবার বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে বিভিন্ন সংস্থা। শিলিগুড়ি সূর্য সেন পার্ক, বসুন্ধরায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে আবিরের বদলে ফুল দিয়ে দোল খেলা হয়। তবে অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না। জলপাইগুড়ির সেবা গ্রাম, ফণীন্দ্র দেব স্কুল ময়দান, মালদহের ডিএস এ ময়দান, উত্তর দিনাজপুরের রবীন্দ্র পল্লী, পূর্ব নেতাজি পল্লীতেও ওই এক অভিযোগ। বালুরঘাট, বুনিয়াদপুর, আলিপুরদুয়ার কোচবিহার জুড়েও ছিল অনুষ্ঠানের হিড়িক।
বহরমপুরে শোভাযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মুর্শিদাবাদ জেলার বেশ কিছু জায়গায় রবিবার ভোরে প্রভাতফেরি বেরিয়েছিল। আনাচে কানাচে নাচগানের মাধ্যমে পালিত হয়েছে বসন্ত উৎসব। দিনভর শহরের অলিতে গলিতে উড়েছে আবির। পথে নামেনি পুলিশও।
মেমারি কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মধুসূদন ভট্টাচার্যকে নিয়ে কৃষ্ণবাজারে দোল খেলায় প্রার্থী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মেমারি শহর তৃণমূলের সভাপতি অচিন্ত্য চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান জেলা সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় সামন্ত প্রমুখ। অভিযোগ, দোলের দিন আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের প্রচারে করোনা সংক্রান্ত বিধি মেনে চলার লক্ষণ দেখা যায়নি। একই ভাবে প্রচার করেছেন আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ও।