প্রতীকী ছবি।
মৃত্যুর পরে টানা প্রায় আঠারো ঘণ্টা পড়ে রইল দেহ। করোনা আতঙ্কে দেহ ছুঁয়েও দেখলেন না এলাকার মানুষ। মৃতের পরিবার, আত্মীয়স্বজনও প্রাথমিক ভাবে দেহে হাত দেননি বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের উদ্যোগে মৃতের নিকট আত্মীয়েরা দেহ উদ্ধার করে সৎকারের জন্য নিয়ে যান।
ক্যানিংয়ের ইটখোলা পঞ্চায়েতের গোলাবাড়ি এলাকার ঘটনা। বছর একান্নর ওই ব্যক্তি কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। দিন কয়েক আগে জ্বর নিয়ে বাড়ি ফেরেন। শ্বাসকষ্টও ছিল।
রবিবার রাতে মারা যান ওই ব্যক্তি। রাত থেকে দেহ পড়ে থাকলেও সৎকারের জন্য এগিয়ে আসেননি কোনও গ্রামবাসী। মৃতের স্ত্রী বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরেই জ্বর, শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ডাক্তার দেখিয়েছি। বুকে কফ জমেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ওঁর টাইফয়েড হয়েছে বলেও রিপোর্টে জানা গিয়েছে। কিন্তু এলাকার মানুষ বলছেন, উনি করোনায় মারা গিয়েছেন। তাই কেউ দেহ ছুঁয়ে দেখেননি, সৎকার করা তো দূরের কথা।” মৃতের ভাই বলেন, “গ্রামের সকলে বলছে দাদা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। কেউ দেহ সৎকার করতে চাননি। আমিও ভয়ে দেহ ছুঁইনি।” এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, “করোনার সমস্ত লক্ষণই ছিল। আমাদের অনুমান, উনি করোনা সংক্রমণের কারণেই মারা গিয়েছেন। আমরা চাই, প্রশাসনিক উদ্যোগে ওঁর দেহ সৎকার হোক।”
সোমবার বিকেল পর্যন্ত দেহ গ্রামে পড়ে ছিল। খবর পেয়ে ক্যানিং থানার পুলিশ এসে গ্রামবাসীদের বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু গ্রামের মানুষ দেহ সৎকার করতে রাজি হননি। এলাকার শ্মশানে দাহ করতেও বাধা দেন তাঁরা। সন্ধ্যায় ক্যানিং ১ বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে ও ক্যানিং থানার আইসি অমিত হাতি ঘটনাস্থলে আসেন। সরকারি ভাবে দু’জন ডোমকে ডাকা হয় দেহ সৎকারের জন্য। স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান খতিব সর্দার মৃতের পরিবারকে বুঝিয়ে দেহ উদ্ধারের জন্য রাজি করেন। পঞ্চায়েত দেহ সৎকারের জন্য ২০ হাজার টাকাও দেয়।
খতিব বলেন, “সকাল থেকেই দেহ সৎকারের চেষ্টা করছি আমরা। কিন্তু গ্রামের কেউ রাজি হননি। শেষে ওঁর কয়েক জন নিকট আত্মীয়কে অনেক বুঝিয়ে রাজি করি।” বিডিও বলেন, “ওই ব্যক্তির মেডিক্যাল রিপোর্টে করোনা সংক্রমণের কথা নেই। তবুও এলাকার মানুষ ভয় পাচ্ছিলেন। সরকারি ভাবে কয়েক জনকে পিপিই দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই মৃতদেহ উদ্ধার করে সৎকারের জন্য নিয়ে গিয়েছেন।”
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)