এলাকা জীবাণুমুক্ত করছেন স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যেরা। নিজস্ব চিত্র
করোনার বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে নতুন বার্তা দিচ্ছে গ্রাম পঞ্চায়েতও। ঝাড়গ্রাম জেলার মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত গড়ে তুলেছে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। সেই বাহিনীতেই নাম লিখিয়েছেন এলাকার বিভিন্ন পেশার ২৫ জন যুবক। নিজেদের জীবন বাজি রেখে পরিষেবা দিতে পথে নেমেছেন তাঁরা।
ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই বাহিনীর নাম ‘মানিকপাড়া কোভিড সহায়তা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী’। ওই দলে রয়েছেন এলাকার ছোট ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাস, ভাড়ার গাড়ির মালিক অমিত শ্রীবাস্তব, চাষি লক্ষ্মণ মাহাতো, নির্মল মাহাতো, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম মেরামতির ব্যবসায়ী অসিত মাহাতোর মতো অনেকেই। যুবকরা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে স্থানীয়দের বাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভবন ও চত্বর জীবাণুমুক্ত করছেন। গৃহ নিভৃতবাসে থাকা করোনা আক্রান্তদের কাছে খাবার ও সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে বাহিনী। এলাকায় কারও মৃত্যু হলে ওই যুবকরাই পিপিই পরে মৃতের শেষকৃত্যের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিচ্ছেন। এলাকার দেওয়ালে নিজেদের মোবাইল নম্বর লিখে দিচ্ছেন। পোস্টার সাঁটিয়ে সকলকে মাস্ক পরার পাশাপাশি, সাবান দিয়ে বারে বারে হাত ধোয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন বাহিনীর সদস্যরা।
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২ মে ললিতাশোল গ্রামে দু’দিনের জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। ওই বৃদ্ধার করোনা পরীক্ষা করানো হয়নি। ফলে পড়শিরা কেউই সৎকারের কাজে এগিয়ে আসেননি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় বারো ঘন্টা ওই বৃদ্ধার মৃতদেহ বাড়িতে পড়েছিল। বিশ্বজিৎ, অমিত-সহ এলাকার কয়েকজন যুবক স্থানীয় মানিকপাড়া বিট হাউসের পুলিশ ও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে পিপিই পরে বৃদ্ধার সৎকার করেন। এরপরই পুলিশ ও মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে ওই যুবকদের নিয়ে বাহিনী গড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বাহিনীর সদস্য বিশ্বজিৎ দাস, মাইকেল ভট্টাচার্য, সন্দীপ দাসেরা বলেন, ‘‘আপাতত নিজেদের খরচেই কাজ করছি। পঞ্চায়েতের তরফে উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস পেয়েছি।’’
গত ৯ মে এলাকায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয় এক যুবকের। মৃতদেহ সৎকারের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। স্থানীয় এক গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার করোনায় আক্রান্ত হন। খবর পেয়ে বাহিনীর সদস্যরা ব্যাঙ্ক জীবাণুমুক্ত করেছেন। মানিকপাড়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মহাশিস মাহাতো বলেন, ‘‘করোনা মোকাবিলায় এলাকার যুবকদের এগিয়ে আসার আবেদন করা হয়েছিল। তাঁরা এগিয়ে আসায় বাহিনী গড়া সম্ভব হয়েছে।’’ কোভিড যোদ্ধা হিসেবে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যদের করোনা প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আবেদন করেছেন মানিকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ।