গ্রাফিক: নিরুপম পাল।
প্রশাসনের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও ভোটের মরসুমে এ রাজ্যে করোনার দৈনিক সংক্রমণে কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। শনিবারের পর রবিবারও রাজ্য জুড়ে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০০ পার করল। ১০ জানুয়ারির পর দৈনিক সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হল। সেই সঙ্গে, সংক্রমণের দৈনিক হারও ফের ৩ শতাংশের গণ্ডি ছাড়িয়ে গেল। এই নিয়ে টানা দু’দিন কলকাতায় প্রায় ৩০০-র কাছাকাছি নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। উত্তর ২৪ পরগনাতেও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২০০-র ছুঁয়েছে।
রবিবার রাতে স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮২৭ জনের মধ্যে নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। ফলে গত ১০ জানুয়ারির পর এ রাজ্যে ১ দিনে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। ওই দিন রাজ্য জুড়ে ৮২৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লক্ষ ৮৪ হাজার ৬৬৬ জন। তার মধ্যে ৫ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩৬৬ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে গত চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকেই দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ফের লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
মহারাষ্ট্র এবং পঞ্জাবের মতো এ রাজ্যেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দিয়েছে। সংক্রমণের গতি রুখতে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব-সহ দেশের মোট ১২টি রাজ্যকে পরিকাঠামোগত প্রস্তুতি সেরে রাখতে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই আবহে করোনাবিধি, টিকাকরণ-সহ স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে বিভিন্ন নীতি মেনে চলার উপর জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। বিশেষ করে ভোটের মরসুমে রাজনৈতিক জনসভা থেকে শুরু করে মিছিল বা প্রচারের কাজে জমায়েতের ফলে সংক্রমণ বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তবে রাজ্যের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, শনিবারের তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় টিকাকরণ একধাক্কায় অনেকটাই কমে গিয়েছে। রবিবার রাজ্য জুড়ে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ২৭৩ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। যদিও শনিবার ৩ লক্ষেরও বেশি টিকাকরণ হয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৪৮ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪৪৫ জনের টিকাকরণ করা হয়েছে।
টিকাকরণের দৈনিক সংখ্যা কমে গেলেও গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড টেস্ট বেড়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের হিসাবে অনুযায়ী, ওই সময়ের মধ্যে রাজ্যে ২৬ হাজার ৫৪৫টি কোভিড টেস্ট করা হয়েছে। শনিবার এই সংখ্যাটা ছিল ২৪ হাজারের কিছু বেশি। কোভিড টেস্টের সংখ্যার মতোই দৈনিক সংক্রমণের হারও ফের ৩ শতাংশ পার করেছে। শনিবার সংক্রমণের হার বা ‘পজিটিভিটি রেট’ ছিল ৩.৩৩ শতাংশ। রবিবার তা সামান্য কমলেও ৩.১২ শতাংশ হয়েছে। পাশাপাশি, এখনও পর্যন্ত সংক্রমণের হার ৬.৪২ শতাংশ ছুঁয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
কোভিডে আক্রান্তদের মধ্যে ইতিমধ্যেই এ রাজ্য়ে ১০ হাজার ৩২৪ জন মারা গিয়েছেন। রবিবারের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে যে ২ জন মারা গিয়েছেন, তাঁরা কলকাতার বাসিন্দা। এই নিয়ে এ শহরে মোট ৩ হাজার ১২০ জনের মৃত্যু হল।
কলকাতায় গত কয়েক দিন ধরেই দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। শুক্রবার থেকে দৈনিক আক্রান্ত একটানা ২০০-র বেশি হয়েছে। রবিবারও সেই প্রবণতা বজায় থেকেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে ২৯২ জন। কলকাতার পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনাতেও দৈনিক সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ওই জেলায় ১৯৩ জনের মধ্যে নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। পাশাপাশি, হাওড়ায় ৬৮ জনের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।
(এই প্রতিবেদনটি প্রথম বার প্রকাশের সময় গ্রাফিক কার্ডে ভুলবশত দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৮২৭-এর পরিবর্তে ৪২৭ ছিল। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।)