চব্বিশ ঘণ্টায় দ্বিগুণ আক্রান্ত রাজ্যে।
একলাফে ৩৪৪! চব্বিশ ঘণ্টা আগেও এ রাজ্যে এক দিনে নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮৩। বৃহস্পতিবারের বুলেটিনে কার্যত তা দ্বিগুণ হল। একযোগে ৩৪৪ জন আক্রান্ত হওয়ায় মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টার ব্যবধানে বঙ্গে মোট আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজারের (৪৫৩৬) গণ্ডি অতিক্রম করল! আর এই বৃদ্ধির মধ্যে বাড়তি নজর কাড়ল হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে তিন জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলার পরে স্বাস্থ্য ভবনের বিশেষ তৎপরতা।
পরিযায়ী শ্রমিক-সহ লকডাউনের মধ্যে ভিন্ রাজ্যে আটকে পড়া বাসিন্দারা নিজেদের ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের হাত ধরে আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় বুধবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনের বুলেটিনে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধির পিছনে একের পর এক শ্রমিক ট্রেনের আগমনই কারণ বলে মত স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের। কলকাতা (৮৭), হাওড়া (৫৫), উত্তর ২৪ পরগনা (৪৯), উত্তর দিনাজপুর (৪৬), বীরভূম (২৭), নদিয়া (১৫), এই ছ’টি জেলা-সহ মোট ১৭টি জেলায় আক্রান্তের হদিস মেলায় ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে।
জেলার এই ছবির মধ্যে কলকাতা পুরসভার অন্দরে ‘চাপ’ বেড়েছে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে তিন জন আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, তিন জন আক্রান্তের মধ্যে দু’জন মহিলা এবং এক জন পুরুষ। আক্রান্তদের সকলের একই ঠিকানা। যার প্রেক্ষিতে এদিন শহরের তিনটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিনের চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত তিনটি পর্যবেক্ষক দলেরই গন্তব্য হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট ছিল বলে খবর।
আরও পড়ুন: ১ জুন থেকে রাজ্যে লোকাল ট্রেন ও মেট্রোতে নারাজ নবান্ন, জানাল কেন্দ্রকে
কলকাতা পুরসভার কন্টেনমেন্ট জ়োনে নজরদারির কাজে এসএসকেএম, এনআরএস এবং আরজিকরের কমিউনিটি মেডিসিনের দু’জন চিকিৎসকদের নিয়ে তিনটি পর্যবেক্ষক দল গঠন করা হয়েছে। কন্টেনমেন্ট জ়োনে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা ঠিক মতো আইএলআই এবং সারি রোগীদের খুঁজে বার করার কাজ করছেন কি না, তা নজরদারি করে রিপোর্ট দেন ওই চিকিৎসকেরা। শহরের উত্তরে আরজিকর, মধ্য কলকাতায় এনআরএস এবং দক্ষিণে এসএসকেএমের চিকিৎসকদের এই নজরদারির কাজে যুক্ত রয়েছেন। এই সংক্রান্ত একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে তিনটি জ়োনে বিভক্ত তিনটি দলকেই এদিন হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে যেতে বলা হয়। যার প্রেক্ষিতে এদিন অন্য যে সকল ওয়ার্ডে ওই দলগুলির যাওয়ার কথা ছিল তা বাতিল করা হয়। দিনভর পিপিই পরিহিত স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসকদের নজরদারিতে কাজ করেন। মাইকিং, সচেতনতা প্রচার-সহ কীভাবে কাজ হয়েছে দিনের শেষে সেই সংক্রান্ত ছবি-মন্তব্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নিয়ম মেনে পোস্ট করা হয়েছে বলে খবর।
‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরসে’র সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘তিন জন আক্রান্ত হওয়ায় হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে যে তৎপরতার সঙ্গে আইএলআই ও সারি রোগীর খোঁজ চলল, সারা রাজ্যেই এই তৎপরতা লক্ষ্য করা যাবে বলে আশা করি।’’ সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের দায়িত্ব হচ্ছে নজরদারির কাজে পরিকল্পনা করা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির আশপাশে তিনটে কেস পাওয়া গিয়েছে বলে চিকিৎসকদের বাড়ি বাড়ি ঘোরানো হবে কেন!’’
আরও পড়ুন: করোনার বিনাশে মন্দিরের ভিতরে ‘নরবলি’ দিলেন ওড়িশার পুরোহিত!
এ দিনের বাকি উল্লেখযোগ্য ঘটনার ঠিকানা হল বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল। করোনা পজ়িটিভ হওয়ায় বুধবার সেখানে বেলেঘাটা থানার ওসি’র স্ত্রী, মেয়ে, শ্যালিকা এবং শ্যালিকার মেয়েকে ভর্তি করতে হয়েছিল। এদিন ওসি এবং তাঁর ছেলের দেহেও করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলার পরে তাঁরাও সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পাশাপাশি, আইডি হাসপাতালের একই কোয়ার্টারের গ্রুপ ডি কর্মী সহ মোট সাত জন আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স এক যক্ষ্মা রোগীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আইডি কর্তৃপক্ষকে উদ্বেগে রেখেছে।
সুজিতের করোনা
রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু করোনায় আক্রান্ত হলেন। বৃহস্পতিবার তাঁকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘‘আমার করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ এলেও করোনার কোনও লক্ষণ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতে কোয়রান্টিনে আছি।’’ বাড়ির অন্য সদস্যরাও কোয়রান্টিনে আছেন বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, দিন তিনেক আগে মন্ত্রীর বাড়ির এক পরিচারিকারও করোনা ধরা পড়েছিল।