গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজ্যের করোনা পরিস্থিতিতে ভিন্ন ছবি দেখা গেল বৃহস্পতিবার। গত দু’দিন ধরে দৈনিক সুস্থের সংখ্যা নেমে গিয়েছিল ৩ হাজারের নীচে। এ দিন ফের দৈনিক সুস্থের সংখ্যা চলে গেল ৩ হাজারের উপরে। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকটা দিন পর, দৈনিক মৃতের সংখ্যাও নেমে গেল ৫০-এর নীচে। আশা জাগিয়ে সংক্রমণের হারও গত ৩ দিনের থেকে কমল কিছুটা।
স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বৃহস্পতিবারের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৩ হাজার ১১২ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এই নিয়ে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হল ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ১৭৫। তবে আশার কথা, রাজ্যে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা মোট ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ২৭ জন। রাজ্যে সুস্থতার হার গত কালকের চেয়ে কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৮৫.৯৫ শতাংশ।
রাজ্যে এখনও পর্যন্ত সক্রিয় করোনা রোগী ২৩ হাজার ৩৭৭ জন। গত কালকের চেয়ে এ দিন রাজ্যে ‘অ্যাক্টিভ কেস’ বে়ড়েছে মাত্র ৩৬টি। গত কাল তা ছিল দ্বিগুণেরও বেশি। রাজ্যে বেশ কয়েক দিন পর এ দিন মৃতের সংখ্যা ৫০-এর নীচে নেমে গিয়েছে। গত রাজ্যে ৫৩ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এ দিন মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। এই নিয়ে করোনায় প্রাণ হারালেন মোট ৩ হাজার ৭৭১ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: লস্কর যোগেই তানিয়ার বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিল এনআইএ
করোনা পরিস্থিতিতে লাগাম পরাতে প্রথম থেকেই বেশি সংখ্যক মানুষের কোভিড পরীক্ষায় জোর দিচ্ছিল রাজ্য প্রশাসন। গত কালের থেকে এ দিন রাজ্যে করোনা পরীক্ষা বেশ কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৪৪ হাজার ৩৪৭। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট করোনা পরীক্ষা হয়েছে ২৩ লক্ষ ৩০ হাজার ২৮৩ জনের।
প্রতি দিন যত জনের কোভিড টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যকের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। গত তিন দিন ধরে রাজ্যে করোনা সংক্রমণের হার ৭.২৯ শতাংশেই আটকে ছিল। এ দিন অবশ্য ব্যতিক্রমী ছবি ধরা পড়েছে। আগের থেকে সংক্রমণের হার কমে হয়েছে ৭.০২ শতাংশ।
দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে রাজ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। এ দিন সেখানে ৫৪১ জন নতুন করে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। গত কালের মতো এ দিনও ওই জেলায় মারা গিয়েছেন ১০ জন। তার থেকে কিছুটা কম দৈনিক সংক্রমণ কলকাতায়। গত ২৪ ঘণ্টায় মহানগরীতে সংক্রমিত হয়েছেন ৪৮১ জন। গত কাল কলকাতায় মৃত্যু হয়েছিল ১৭ জনের। এ দিন প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন।
আরও পড়ুন: করোনা-আক্রান্ত কলকাতার নগরপাল অনুজ শর্মা
এ ছাড়া দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২১৪, হুগলিতে ১৫৪, হাওড়ায় ১৫৯, পশ্চিম বর্ধমানে ১৩১, পূর্ব বর্ধমানে ১০২, পূর্ব মেদিনীপুরে ১৯৮, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৫৬, বাঁকুড়ায় ৯৩, পুরুলিয়ায় ৫৬, বীরভূমে ৫৫, নদিয়ায় ১৫১ এবং মুর্শিদাবাদে ৯৮ জনের করোনা ধরা পড়েছে এ দিন। হুগলিতে ২ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে ৬৬, কোচবিহারে ৭১, দার্জিলিঙে ৮৬, জলপাইগুড়িতে ৮৫, উত্তর দিনাজপুরে ৫৪ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে ৮০ এবং মালদহে ৬৩ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এ দিন। এর মধ্যে উত্তর দিনাজপুর এবং মালদহে ২ জন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২)