গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজ্যের করোনা পরিস্থিতিতে পর পর তিন দিন একই ছবি। সুস্থের থেকে বেশি দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে টানা দৈনিক আক্রান্তের থেকে দৈনিক সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটা বাড়ছিল। তাতে আশার আলো দেখছিলেন অনেকে। কিন্তু সোমবার আচমকাই বেড়ে যায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। সেই চিত্রের বদল হল না এ দিনও। তবে গত কালকের চেয়ে কিছুটা কমেছে মৃতের সংখ্যা।
স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৩ হাজার ১০৭ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এই নিয়ে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হল ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৬৩। তবে আশার কথা রাজ্যে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা মোট ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৯৯২। এ দিন সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২ হাজার ৯৬৭ জন। রাজ্যে সুস্থতার হার গত কালকের চেয়ে কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৮৫.৭৬ শতাংশ।
রাজ্যে এখনও পর্যন্ত সক্রিয় করোনা রোগী ২৩ হাজার ৩৪১ জন। গত কালকের চেয়ে এ দিন রাজ্যে ‘অ্যাক্টিভ কেস’ বেড়েছে ৮৭টি।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: আসছে সপ্তাহে মেট্রো চালু, কোথায় কী ভাবে ই-পাস পাবেন
গত কাল রাজ্যে মৃত্যু হয়েছিল ৫৭ জনের। এ দিন অবশ্য তাতে কিছুটা রাশ টানা গিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে করোনায় প্রাণ হারালেন মোট ৩ হাজার ৭৩০ জন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশি সংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষায় শুরু থেকেই জোর দিয়ে আসছিল রাজ্য প্রশাসন। রবিবার রাজ্যে সর্বোচ্চ—৪৬ হাজার ৫০৫টি করোনা পরীক্ষা হয়। এ দিন অবশ্য ৪২ হাজার ৬৪২ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট করোনা পরীক্ষা হয়েছে ২২ লক্ষ ৮৫ হাজার ৯৩৬ জনের।
প্রতি দিন যত জনের কোভিড টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যকের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। গত কয়েক দিন ধরে আক্রান্তের চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছিলেন বলে সংক্রমণের হারও ৬ শতাশের ঘরে ঘোরাফেরা করছিল। গত তিন দিন ধরে রাজ্যে করোনা সংক্রমণের হার ৭.২৯ শতাংশেই আটকে রয়েছে।
আরও পড়ুন: সুশান্ত খুব জটিল এক মানুষ, হোয়াটসঅ্যাপে বলেছিলেন অনুরাগ
দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে রাজ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। এ দিন সেখানে ৫৭০ জন নতুন করে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। ওই জেলায় মারা গিয়েছেন ১০ জন। তার থেকে কিছুটা কম দৈনিক সংক্রমণ কলকাতায়। গত ২৪ ঘণ্টায় মহানগরীতে সংক্রমিত হয়েছেন ৫৫৪ জন। তবে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের।
এ ছাড়া দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৫২, হুগলিতে ১৫৬, হাওড়ায় ১৪৫, পশ্চিম বর্ধমানে ১৫৫, পূর্ব বর্ধমানে ১০১, পূর্ব মেদিনীপুরে ১৬৪, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১২৬, বাঁকুড়ায় ৭১, পুরুলিয়ায় ৯২, বীরভূমে ৪৫, নদিয়ায় ১২৬ এবং মুর্শিদাবাদে ৮৫ জনের করোনা ধরা পড়েছে এ দিন। হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম বর্ধমানে ২ জন করে এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩ জন রোগীর মৃত্যুও হয়েছে। নদিয়াতেও মারা গিয়েছেন ৪ জন।
উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে ৭৮, কোচবিহারে ৯১, দার্জিলিঙে ৫৭, জলপাইগুড়িতে ৮৩, উত্তর দিনাজপুরে ৬৮ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে ৯৪ এবং মালদহে ৬০ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এ দিন। এর মধ্যে মালদহে ৪ এবং আলিপুরদুয়ার ও দার্জিলিঙে ২ জন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)