গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
সংক্রমণ বাড়ছে। কিন্তু সংক্রমণের হার কমছে। গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতিতে এমন ছবিই বহাল রয়েছে। রবিবারও তার ব্যতিক্রম হল না। তার সঙ্গে সেই চিত্রে আরও স্বস্তি জুগিয়েছে সুস্থতার হার। গত কয়েক দিন ধরেই করোনাকে হারিয়ে রাজ্যে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটা চমকপ্রদ। তবে ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যাটা গত কালকের থেকে ফের এক লাফে খানিকটা বেড়ে গিয়েছে।
আজ সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ৩ হাজার ২৭৪ জনের। শনিবার সেই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ২৩২। এই নিয়ে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন হয়েছে ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৮৭০ জন।
শুক্রবার রাজ্যে মত্যু হয়েছিল ৫৫ জনের। শনিবার সেই সংখ্যাটা কমে হয়েছিল ৪৮। রবিবার ফের তা এক লাফে বেড়ে ৫৭ হয়ে গিয়েছে। এই নিয়ে রাজ্যে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৭৯৪ জনের। এ দিন কলকাতায় মারা গিয়েছেন ৮ জন। ১৮ জন মারা গিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনায়। এ ছাড়া হুগলিতে ৬, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৩, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩, হাওড়ায় ৫ এবং মালদহে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: সফল পেশাদাররা দলে দলে সক্রিয় রাজনীতিতে, কারণ কি ‘লকডাউন সিনড্রোম’?
গোড়া থেকেই রাজ্যের মধ্যে কলকাতাতেই সবচেয়ে বেশি নতুন আক্রান্তের সন্ধান মিলছিল। এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী, কলকাতায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬৩ জন। শনিবার নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫১৬। এই নিয়ে কলকাতায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৩৬ হাজার ২৫৭।
সংক্রমণের নিরিখে কলকাতার পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী, সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন ৬৯৬ জন। গতকাল নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৪৭। সব মিলিয়ে ওই জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২৯ হাজার ৩১৫ জন। এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৮৭, হুগলিতে ১৮০, হাওড়ায় ১৫৯, পশ্চিম বর্ধমানে ১০৪, পূর্ব বর্ধমানে ২১, পূর্ব মেদিনীপুরে ২০৯, পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৮৫, বাঁকু়ড়ায় ১০৫, পুরুলিয়ায় ৬৫, বীরভূমে ৪২, নদিয়ায় ১০৮ এবং মুর্শিদাবাদে ৮৬ জন নতুন করোনা আক্রান্ত ধরা পড়েছে।
আরও পড়ুন: তৃণমূল সরকারের কাছ থেকে পাওয়া জমি ফিরিয়েই দিলেন সৌরভ
উত্তরবঙ্গে সংক্রমণের ছবিটা এমন— আলিপুরদুয়ারে ১৩, কোচবিহারে ৫৯, দার্জিলিঙে ৬২, জলপাইগুড়িতে ৭২, উত্তর দিনাজপুরে ৩০, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৯৭ ও মালদহে ১০২ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন।
সংক্রমণ বাড়লেও, আশার আলো জাগাচ্ছে সুস্থতার হার। শনিবার রাজ্যে সুস্থতার হার ছিল ৭৭.৪১ শতাংশ। রবিবার তা বেড়ে হয়েছে ৭৭.৭৮ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ১ লক্ষ ৮ হাজার ৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এর মধ্যে এ দিনই ছাড়া পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৮ জন। রাজ্যে এখন সক্রিয় করোনা রোগী ২৮ হাজার ৬৯ জন।
উদ্বেগের মাত্রা কমছে সংক্রমণের হারেও। প্রতি দিন যত জন রোগীর কোভিড টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যক রোগীর কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকেই ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। বেশ কিছু দিন ধরেই এই সংক্রমণের হার নীচে নামছিল। শনিবার সংক্রমণের হার ছিল ৮.৯০ শতাংশ। রবিবার তা আরও নেমে হয়েছে ৮.৮১ শতাংশ। এ দিন ৩৭ হাজার ১৪৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে যা এখনও পর্যন্ত রেকর্ড। রাজ্যে মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৫ লক্ষ ৬১ হাজার ৩১১ জনের।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)