ছবি: পিটিআই।
গোটা বিশ্বকে সন্ত্রস্ত করে তুললেও করোনার উৎস ও মতিগতি এখনও রহস্যে ঢাকা। তার গতিপথের সুলুকসন্ধান পেতে তীব্র শ্বাসকষ্ট এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো জ্বরের উপসর্গের নজরদারি শুরু করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সেই নজরদারির নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য-জেলায় থাবা বসানোর জন্য তোড়জোড় করছে করোনা। এই অবস্থায় রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা মঙ্গলবার জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সতর্ক করে দিয়ে জানান, এখন থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেখানে উপসর্গ নেই, সেখানে আদৌ নজরদারি হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি যেখানে জ্বর-শ্বাসকষ্টের রোগী বেশি আসছেন, সেখানে নজরদারি আরও জোরদার করতে বলেছে স্বাস্থ্য ভবন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন ফেসবুকে জানান, ৭ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত রাজ্যে পাঁচ কোটি ৫৭ লক্ষ মানুষের উপরে সমীক্ষা চালিয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেস (আইএলআই) এবং সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন (সারি) উপসর্গের রোগীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ৯১,৫১৫ জনের আইএলআই উপসর্গ এবং ৮৭২ জনের সারি-উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩৭৫ জনকে ভর্তি করানো হয়েছে হাসপাতালে। ৬২ জনের করোনা সংক্রমণ হয়েছে। ৬০ হাজার আশাকর্মী এই সমীক্ষা চালিয়েছেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে পরপর দু’সপ্তাহের চিত্র পাঠিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে স্বাস্থ্য ভবন। তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী নদিয়া ও কলকাতায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎই জ্বর-শ্বাসকষ্টের (সারি) উপসর্গ বেড়ে গিয়েছে। কোনও স্থানীয় সংক্রমণের ‘ক্লাস্টার’ তৈরি হয়েছে কি না, তা জানাতে বলেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। আবার আশ্চর্যজনক ভাবে বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলায় গত দু’সপ্তাহে কোনও সারি-উপসর্গের রোগী দেখা যায়নি। অবিলম্বে নজরদারি বাড়িয়ে এই ধরনের রোগী খুঁজে বার করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কলকাতার বাইরে রাজ্যের কন্টেনমেন্ট জোন কী কী, দেখে নিন
আরও পড়ুন: লকডাউন যুঝতে ডিজিটাল লাইব্রেরি খুলে দিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
উত্তর দিনাজপুর, ডায়মন্ড হারবার, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সারি-উপসর্গ বাড়ছে কেন, তা জানতে চেয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। নন্দীগ্রাম, বসিরহাট, হুগলি ও মালদহে গত দু’সপ্তাহে সে-ভাবে কোনও ইনফ্লুয়েঞ্জার রোগী পাওয়া যায়নি। যেটা অস্বাভাবিক বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের পর্যবেক্ষণ। সেই জন্য ওই চার স্বাস্থ্য-জেলায় আরও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। এক মাসে যেখানে রাজ্যে প্রায় এক লক্ষ আইএলআই রোগী পাওয়া গিয়েছে, সেখানে ওই সব জেলায় রোগী না-পাওয়াটা অস্বাভাবিক বলে মনে করছে স্বাস্থ্য ভবন। ডায়মন্ড হারবারে আইএলআইয়ের প্রকোপ ২৭ এপ্রিল থেকে ৩ মে-র মধ্যে অনেক বেড়ে গিয়েছে। কোনও স্থানীয় সংক্রমণের কারণে এই বৃদ্ধি কি না, সংশ্লিষ্ট জেলার কাছে তা জানতে চেয়েছে রাজ্য। উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, জলপাইগুড়িতেও ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। যা চিন্তা বাড়াচ্ছে সরকারের।
স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘প্রতি সপ্তাহে সারি এবং আইএলআইয়ের প্রকোপ দেখে করোনার মতিগতি যাচাই করা হচ্ছে। যেখানে যত বেশি উপসর্গ, সেখানে তত বেশি কড়াকড়ি চালানো হবে।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)