অস্ত্র জীবাণুনাশক: রবিবার গিরিশ পার্কের কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিটে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ধরপাকড় চললেও মিথ্যা খবর ও গুজব ছড়ানোর প্রবণতায় রাশ টানা যাচ্ছে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তি, উদ্বেগ, ঘৃণাও। জেরবার পুলিশ-প্রশাসন।
এ বার এক অভিনেতাকে দিয়ে মিথ্যা খবর বলিয়ে সমাজমাধ্যমে প্রচারের অভিযোগ উঠল। যার জেরে বসিরহাটের মাটিয়া থানার হাতে গ্রেফতার হয়েছেন এক যুবক। পুলিশ জানায়, এনামুল সাহাজি নামে ওই যুবকের বাড়ি বসিরহাটের উত্তর বাগুন্ডি গ্রামে। রেশনের দোকানে খাতা লেখেন তিনি। অভিযুক্ত আরও কয়েক জনের খোঁজ চলছে।
বসিরহাটের বেগমপুরের বাসিন্দা মোবারক মণ্ডল স্বরূপনগরে যান ১৫ এপ্রিল। একটি আমবাগানে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। তদন্তকারীরা জেনেছেন, মোবারক নাটক, যাত্রা করতেন। যুবকেরা তাঁকে বলেন, রাজ্য সরকার করোনায় গরিবদের ত্রাণ দিচ্ছে না— এটা যেন তিনি অভিনয় করে দেখান। সমাজমাধ্যমের ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, কাঁদতে কাঁদতে মোবারক বলছেন, ‘দু’দিন খেতে পাই না। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, আমরা তো আপনার সন্তান। আমাদের দেখুন। বিধায়ক-সাংসদকে বলছি, আপনারা আমাদের একটু দেখুন। আর সহ্য করতে পারছি না। আমাদের দেখুন, নয়তো গুলি করে মেরে দিন।’
করোনা তথ্য
• হাসপাতালে থেকে কাজের নির্দেশ ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের
• রাজ্যে অ্যাক্টিভ পজ়িটিভ করোনা রোগী ১৯৮
• সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছেন ৬৬
• মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫০৪৫
• মোট মৃত্যু ১২
• সরকারি কোয়রান্টিন কেন্দ্র চালু ৫৮২
• সেখানে রয়েছেন ১৩,৫৬০
• ছাড়া পেয়েছেন ৯৫৯৮
• গৃহ পর্যবেক্ষণে রয়েছেন ৩৫০৮১
• ছাড়া পেয়েছেন ২৩,১৩২
তথ্য সূত্র : স্বাস্থ্য দফতর
তদন্তকারীদের দাবি, পুরো অভিনয় পর্ব গোপনে মোবাইলে রেকর্ড করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সমাজমাধ্যমে। নিমেষে তা ভাইরাল হয়ে যায়। এনামুলও নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে সেই ভিডিয়ো আপলোড করেছিলেন। বসিরহাটের এক ব্যক্তি বিষয়টি মাটিয়া থানাকে জানান। তদন্তে নামে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ‘বাড়িই এখন অফিস’, বললেন নরেন্দ্র মোদীও
চাপে পড়তে চলেছেন বুঝতে পেরে মোবারককে দিয়ে পরে আরও একটি ভিডিয়ো রেকর্ডিং করান ওই যুবকেরা। সেটিতে মোবারককে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমার পরিবারে সাতটা রেশন কার্ড আছে। বিনামূল্যে সব কিছু মাল পাই। এর কোনও তুলনা হয় না।’ ওই ভিডিয়োয় মোবারকের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাও শোনা যায়।
আরও পড়ুন: কম কর্মী ও অফিসার নিয়ে আজ অফিস শুরু
পুলিশ মোবারককে জিজ্ঞাসাবাদের পরে শনিবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করে এনামুলকে। তাঁর বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইমের ধারায় মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার রাজ্য বিজেপির টুইটার হ্যান্ডল থেকে একটি ভিডিয়ো পোস্টে প্রশ্ন তোলা হয়, ‘শুনতে পাচ্ছ কি মানুষের কান্না! তৃণমূল’, লেখা হয়, ‘রেশন লুট বন্ধ করুন’। ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, এক বৃদ্ধ কেঁদে বলছেন, তিনি জামাল মল্লিক এবং আর এক জন ফিরোজ মণ্ডল দু’দিন খেতে পাননি। স্থানীয় বিধায়ক রফিকুল ইসলাম, সাংসদ নুসরত জাহান এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তিনি। নুসরতকে ট্যাগ করা হয় ওই ভিডিয়োয়।
পরে নুসরত রাজ্য পুলিশের একটি টুইট পোস্ট করে লেখেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে ধন্যবাদ। জাল খবর শেয়ার না-করার অনুরোধ করছি সকলকে।’ রাজ্য পুলিশের ওই টুইটে লেখা আছে, ‘যাত্রাশিল্পীকে দিয়ে বাংলার রেশন সংক্রান্ত সম্পূর্ণ ভুল তথ্য প্রয়োগ ও পরিবেশন। তাঁর ডিজিটাল রেশন কার্ড আছে এবং ২ এপ্রিল, ২০২০-তে তিনি রেশন সংগ্রহও করেছেন। দোষীদের গ্রেফতার করা হবে। সাবধানে থাকুন। দায়বদ্ধ থাকুন।’ অন্য একটি ভিডিয়োয় ওই ব্যক্তিকে বলতে দেখা যায়, তিনি যাত্রায় অভিনয় করতেন। তাঁকে কয়েক জন ওই অভিনয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি তা করেন।
রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘ওই দ্বিতীয় ভিডিয়ো থেকে আবার প্রমাণিত হল, এ রাজ্যের পুলিশ কতটা দলদাস। তারা ওই ব্যক্তিকে ভয় দেখিয়ে নিজেদের সুবিধেমতো কথা বলিয়ে নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে রেশন কতটা মিলছে, রাজ্যের গরিবেরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই তা জানেন।’’
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘পুরোটাই নোংরা রাজনীতি।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)