Coronavirus in West Bengal

দাহকার্যে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা ইমামের

গত বৃহস্পতিবারই বীরভূমের সিউড়ির সোনাতোড় পাড়ায় এক ব্যক্তির স্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে একই ঘটনা ঘটে। তিনি একাই থাকতেন।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২০ ০৫:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

কঠিন এক পরিস্থিতি। করোনায় মৃত্যু হলে দেহ সৎকার করতে গিয়ে প্রশাসনকে বিস্তর ঝঞ্ঝাট পোহাতে হচ্ছে। আবার স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও করোনা সন্দেহে দেহ সৎকার কিংবা কবরস্থ করার লোক পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমনই পরিস্থিতিতে ভরসার হাত বাড়িয়ে দিল রাজ্যের মুসলিম সমাজ। মৃতের ধর্মীয় পরিচয় না দেখেই দেহ কাঁধে তুলে নিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দিলেন স্বয়ং বঙ্গীয় ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহম্মদ ইয়াহিয়া।

Advertisement

দেহ কবরস্থ করা তো বটেই, এই দুঃসময়ে মৃতদেহের দাহকার্যের জন্যও সমাজের লোকজনের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে ইয়াহিয়া তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘করোনা ছাড়াও রাজ্যে স্বাভাবিক মৃত্যু হচ্ছে। আমাদের কাছে খবর আসছে ওই সব মৃতদেহ দাহ বা কবরস্থ করতে অনেকেই এগিয়ে আসছেন না। সাধারণ মুসলিমদের কাছে আমার বিনীত আবেদন, মৃতের ধর্ম পরিচয় না দেখে শবদেহ কাঁধে বহন করে শ্মশান বা কবরস্থানে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করুন।’ ওই পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই কঠিন দুঃসময়ে আমাদের এক হতেই হবে।’

গত বৃহস্পতিবারই বীরভূমের সিউড়ির সোনাতোড় পাড়ায় এক ব্যক্তির স্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে একই ঘটনা ঘটে। তিনি একাই থাকতেন। তাঁর ভাই শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘করোনা আতঙ্কে দাদার দেহ দাহ করতে পাড়ার কেউ এগিয়ে আসেননি। শেষে পাড়ার মুসলিম ছেলেরাই কাঁধে করে দাদার দেহ বহন করেছিলেন। বাদশা, নুর, বাপ্পা, মফিজুলদের জন্য তাই গর্ব হচ্ছে।’’

Advertisement

আরও খবর: ‘পুনরাবৃত্তি হইবে না’, নববর্ষে এটুকুই আশা

কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, বহু ক্ষেত্রে শহরের শ্মশান বা কবরস্থানে ডোম বা কবরখানার লোকেরা মৃতদেহ ছুঁতে চাইছেন না। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণের ভয় কাজ করছে মানুষের মনে। করোনায় মৃতদেহ দাহ বা কবরস্থ করতে আমাদের বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে। এই নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। এ বিষয়ে শহরের প্রতিটি শ্মশান ও কবরস্থানে নোটিস পাঠানো হচ্ছে।’’

ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুল গনি বলেন, ‘‘স্বাভাবিক মৃত্যুর শেষকৃত্য নিয়ে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে বিষয়ে রাজ্যের প্রায় ১৫ হাজার মসজিদের ইমামদের নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছে।’’

আরও খবর: হাসপাতালে করোনা, আবাসনে ঢুকতে বাধা স্বাস্থ্যকর্মীদের

পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী বলেন, ‘‘মৃত্যু মানে তাতে করোনার ছোঁয়া আছে এটা ধরে নেওয়া অনুচিত। আমার বিনীত আবেদন, অহেতুক আতঙ্কিত হবেন না।’’

ইয়াহিয়া তাঁর পোস্টে এই দুঃসময়ে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে থাকতেও সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর পোস্টে দু’টি দিক খুঁজে পেয়েছেন মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘মানুষের ধর্মই হল আত্মকেন্দ্রিকতা। নিজেকে বাঁচানোর তাগিদেই এখন স্বাভাবিক মৃত্যুতে মৃতের দেহ সৎকারের কাজে এগিয়ে আসছেন না তাঁর আত্মীয়েরা।’’ পাশাপাশি নীলাঞ্জনার সংযোজন, ‘‘মুসলিমদের কাঁধে হিন্দু ব্যক্তির দেহের ছবি হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের বন্ধন আরও দৃঢ় করবে। এই ঘোর দুর্যোগেও এই ছবি বড় পাওনা।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement