শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর কেনাকাটা।—ফাইল চিত্র।
পুজো পরিক্রমার হাত ধরে উদ্বেগের মাত্রা কতখানি বাড়বে, তা নিয়ে আপাতত চিন্তিত স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্য অধিকর্তার বক্তব্যেই সেই ভাবনার প্রতিফলন ঘটল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর আয়োজিত ওয়েবিনারে। স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘আমরা আরও একটা সংক্রমণের ঢেউ আসতে চলেছে বলে মনে করছি। বিশেষত পুজো যখন আসন্ন। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ আটকানোই এখন লক্ষ্য।’’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিদিনের বুলেটিনেই এই মন্তব্যের তাৎপর্য লুকিয়ে রয়েছে। পুজোর বাজার গতি পেতে প্রতিদিনের আক্রান্তের সংখ্যায় বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই আবহে উৎসবের ক’দিন ঠাকুর দর্শনের পরে বঙ্গে কোভিড-দর্শনের রেখাচিত্র কী হবে, সেটিই স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কাছে মাথাব্যথার কারণ। সংক্রমণের গতিবিধি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর আয়োজিত ওয়েবিনারে রবিবার স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানান, ২০-৪০ বছর বয়সিদের নিয়ে চিন্তা সবচেয়ে বেশি? কারণ, তাঁরাই সম্ভাব্য ‘সুপার স্প্রেডার’!
ওয়েব-মঞ্চে স্বাস্থ্য অধিকর্তার বক্তব্য, বয়স্ক মানুষেরা সাধারণত বাড়িতেই থাকছেন। কিন্তু ২০-৪০ বছর বয়সিদের একাংশ বাইরে বেরোলেও ঠিক মতো মাস্ক ব্যবহার করছেন না। পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি মেনে চলা তো দূর, আগের মতোই মেলামেশা শুরু করে দিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তার কথায়, ‘‘এই বয়সের তরুণ-তরুণীরা হয়তো নিজেরা আক্রান্ত হচ্ছেন না। কিন্তু নিজেদের অজান্তে সংক্রমণকে বয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাঁরাই আমার কাছে সুপার স্প্রেডার।’’
স্বাস্থ্য দফতরের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন এমসের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রফেসর সঞ্জয় রাই। তিনি জানান, সংক্রমণকে প্রতিহত করে পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি। মাস্কের মাধ্যমে এক জন নিজে তো বটেই, অপরকেও রক্ষাকবচ দেন। এ রাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আক্ষেপ, এই সহজ সত্যটুকু গত সাত মাসে রাজ্যবাসীর একাংশ জেনেও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘প্রতি বছর অগ্নি সুরক্ষা বিধি, অত্যধিক ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক থাকে। নিয়ম না মানায় পুজো বন্ধ করা হয়েছে সেই নজিরও রয়েছে। এ বার করোনা-সংক্রমণ আটকাতে পুজো উদ্যোক্তাদের ব্যবস্থাপনা যথাযথ কি না, তা দেখার জন্য প্রতিনিধি দলে চিকিৎসকেরাও থাকুন।’’
কার্ডিওথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকারের বক্তব্য, এ বছর আবেগকে দূরে সরিয়ে পুজো নিয়ে বাস্তববোধ থাকাটা জরুরি। তাঁর কথায়, ‘‘এ রাজ্যে কম নমুনা পরীক্ষা করেও কেস বাড়ছে। প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজারের ঘরে আক্রান্তের সংখ্যাতেই বেসরকারি হাসপাতালে সিসিইউয়ে কার্যত কোনও বেড নেই। সরকারি হাসপাতালেও ভিড় বাড়ছে। এর উপরে আড়াই-তিনগুণ আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বেড আসবে কোথা থেকে!’’