প্রতীকী ছবি।
করোনা-চিকিৎসা প্রোটোকলে রেমডিসিভির, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। ঘটনাচক্রে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা (সলিডারিটি ট্রায়াল) সেই দুই ওষুধেরই কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। যার প্রেক্ষিতে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসায় ওই দুই ওষুধের ব্যবহার নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত চিকিৎসক মহল।
(গ্রাফের উপর হোভার টাচ করলে দিনের পরিসংখ্যান দেখা যাবে)
‘সলিডারিটি ট্রায়াল’ থেকে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনা রোগীর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময় কমিয়ে আনা বা ভেন্টিলেশনে যাওয়া আটকানোর ক্ষেত্রে রেমডিসিভির, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, লোপিনাভির এবং ইন্টারফেরনের প্রভাব হয় খুব কম নয় একেবারেই কোনও কার্যকারিতা নেই। কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্যের করোনা প্রোটোকলেও কোভিড রোগীর চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, রেমডিসিভিরের ব্যবহারে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণার পরে প্রোটোকল পরিমার্জন করা হবে কি না, তা নিয়ে চিকিৎসক মহলে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ফার্মাকোলজির বিভাগীয় প্রধান শান্তনু ত্রিপাঠী জানান, কোভিডে রেমিডিসিভির, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহারে কার্যকারিতা নিয়ে চূড়ান্ত প্রামাণ্য তথ্য ছিল না বলেই সেগুলিকে জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘সেই অনুমোদন বহাল থাকবে নাকি প্রত্যাহার করা হবে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে পুনর্বিবেচনা যে প্রয়োজন সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’’ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কোভিড প্রোটোকল প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পাল জানান, এ ধরনের পরিস্থিতিতে ‘মেটা-অ্যানালিসিস’ করা প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘একাধিক গবেষণা থেকে উঠে আসা তথ্যকে একযোগে বিশ্লেষণ করা। একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তা করা হয়। সেই বিশ্লেষণ থেকে যা বেরোবে তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।’’
তবে করোনার প্রভাব কমাতে রেমডিসিভিরের মতো অ্যান্টি ভাইরালের খুব একটা ভূমিকা আছে বলে মনে করেন না রাষ্ট্রীয় বাল সুরক্ষা কার্যক্রমের উপদেষ্টা তথা নিওনেটোলজিস্ট অরুণ সিংহ। তাঁর মতে, রোগীয় বয়স পঞ্চাশের বেশি হওয়ার পাশাপাশি ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপের মতো কো-মর্বিডিটি থাকলে দেহে প্রদাহের ঝড় শুরু হওয়ার আগেই স্টেরয়েডের প্রয়োগ অনেক বেশি কার্যকরী। গত ২৮ সেপ্টেম্বর করোনা ধরা পড়ে প্রবীণ চিকিৎসকের। তাঁর কথায়, ‘‘সাইটোকাইনকে কমাতে পারে স্টেরয়েড। আমি নিজেকে দিয়ে দেখেছি, স্টেরয়েড নিলে সাইটোকাইন বন্ধ হচ্ছে। স্টেরয়েডের অনুপস্থিতিতে তা আবার বাড়ছে। করোনায় স্টেরয়েড হল মূল অভিনেতা। বাকি অ্যান্টি ভাইরাল সবই পার্শ্বচরিত্র। তাই কারা গুরুতর অসুস্থ হতে পারেন তা বুঝে গোড়াতেই স্টেরয়েড দেওয়া প্রয়োজন।’’ এ বিষয়ে আরজিকরের মেডিসিনের প্রফেসর জ্যোতির্ময়বাবুর মত অবশ্য ভিন্ন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যে কোনও সংক্রমণেই সাইটোকাইন বের হয়। একেবারে গোড়ায় স্টেরয়েড দিলে মানবদেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। তাই প্রদাহ সূচক দেখে চিকিৎসক যখন বুঝবেন প্রচুর পরিমাণে সাইটোকাইন বার হচ্ছে তখনই স্টেরয়েড দেওয়া উচিত।’’