প্রতীকী চিত্র।
করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে আরও এক চিকিৎসকের মৃত্যু হল বৃহস্পতিবার। শোকের আবহেও করোনা তকমা নিয়ে ছুঁৎমার্গ পিছু ছাড়ল না মৃতের পরিবারের।
হাওড়ার বাসিন্দা মৃত চক্ষু চিকিৎসকের ছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবারের পরে রাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬০৬ জন। নতুন করে ৪৭৫ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। এক দিনে আক্রান্তের নিরিখে এদিনের পরিসংখ্যান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গত ১২ জুন এক দিনে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪৭৬ জন। রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫৬৪৮।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গত ১৩ জুন থেকে প্রস্রাবের সমস্যা শুরু হয় ৬৪ বছরের বৃদ্ধ চিকিৎসকের। দিন তিনেক পরে তাঁর জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়। আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে বৃদ্ধকে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ছ’দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে হাওড়া জেলায় অবস্থিত কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসককে স্থানান্তর। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ চিকিৎসককে মৃত ঘোষণা করা হয়। বৃদ্ধ চিকিৎসকের মৃত্যুতে সামাজিক ফতোয়ার ভয় পাচ্ছে পরিবার। মৃতের ছেলে জানান, করোনায় বাবার মৃত্যু হয়েছে জানাজানি হলে কর্মস্থলে সমস্যায় পড়তে পারেন তাঁরা। ইতিমধ্যে সেই রকম আভাসও মিলেছে।
ঘটনাচক্রে, এ দিনই হাসপাতালগুলিতে প্রোটোকল মেনে চিকিৎসা হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে দু’টি ‘প্রোটোকল মনিটরিং টিম’ গড়েছে স্বাস্থ্য ভবন। দু’টি দলে তিন জন করে মোট ছ’জন চিকিৎসক রয়েছেন। বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, কো-মর্বিডিটিতে আক্রান্ত রোগীদের কী ধরনের চিকিৎসা হচ্ছে সে দিকে নজর থাকবে স্বাস্থ্য ভবনের চিকিৎসক দলের। করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হলে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে পৌঁছে সেখানকার চিকিৎসা পদ্ধতি খতিয়ে দেখবেন স্বাস্থ্য ভবনের প্রতিনিধিরা।
আগে স্বাস্থ্য দফতরের এক চিকিৎসক কর্তার পাশাপাশি আরও এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম’-এর সম্পাদক কৌশিক চাকী বলেন, ‘‘ওই চিকিৎসককে কোভিড শহিদ ঘোষণা করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য নিয়মিত তাঁদের নমুনা পরীক্ষা করতে হবে।’’
এ দিকে করোনা সন্দেহভাজন এক রোগীর মৃত্যুর পরে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার ঘটনা ঘটেছে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। জ্বর এবং শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে মঙ্গলবার ওই রোগীর মৃত্যু হয় বলে খবর। বৃহস্পতিবার তাঁর নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। মৃতের সংস্পর্শে আসা চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের নমুনা পরীক্ষা হবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের পরিধির বাইরে এ দিন বারুইপুর জেলার এক আধিকারিক এবং এক কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর।