জেলাভিত্তিক করোনা আক্রান্তের তালিকা দিল রাজ্য সরকার। সোমবার নবান্ন থেকে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্ত ১২৫৯ জন। চিকিৎসার পর ছাড়া পেয়েছেন ২১৮ জন। রাজ্যে সোমবার পর্যন্ত সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯০৮।
মুখ্যসচিব এ দিন জানান, ১২৫৯ জন আক্রান্তের মধ্যে করোনার কারণে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। একই সঙ্গে তিনি জানান, অডিট কমিটি ১০৫ জনের মৃত্যুর কারণ নিয়ে অডিট করে। তাঁদের প্রত্যেকের শরীরেই করোনার উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছিল। কিন্তু অডিট কমিটি তার মধ্যে করোনার কারণে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায়। বাকি ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে কো-মর্বিডিটির জন্য। ফলে করোনা আক্রান্ত ১৩৩ জনের মৃত্যু হলেও তার মধ্যে করোনার কারণেই ৬১ জনের প্রাণ গিয়েছে।
কেন্দ্র যে রেড জোনের তালিকা দিয়েছিল, তাতে রাজ্যে মোট ১০টি জেলা রেড জোনে রয়েছে। কিন্তু সোমবার রাজ্য সরকার যে তালিকা দিয়েছে, তাতে রেড জোনে রয়েছে চারটি জেলা— কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগান ও পূর্ব মেদিনীপুর।
রাজ্যের হিসেবে অরেঞ্জ জোনের তালিকায় রয়েছে ১২টি জেলা। সেগুলি হল দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, দার্জিলিং।
রাজ্যের হিসেবে ৭টি জেলা গ্রিন জোনে রয়েছে। অর্থাৎ এই জেলাগুলিতে কোনও করোনা আক্রান্ত নেই। সেই জেলাগুলি হল আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রাম।
রেড জোনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়িয়েছে কলকাতায়। এখানে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫৯। এর মধ্যে সোমবার নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ৮৭ জনের। চিকিৎসার পর ছাড়া পেয়েছেন ১০৯ জন। সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬৩।
হাওড়ায় মোট আক্রান্ত ২৪১ জন। এর মধ্যে সোমবার নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ২১। মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছেন ২০ জন। জেলায় সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০৪।
উত্তর ২৪ পরগনায় মোট করোনা আক্রান্ত ১৭৮ জন। মৃত্ ১৮। চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছেন ৩৬ জন। সক্রিয় করোনা আক্রান্ত রয়েছেন ১২৪ জন।
রেড জোন পূর্ব মেদিনীপুরে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬। তার মধ্যে দু’জন সোমবার আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়েছে ২১ জনকে। এখন সক্রিয় আক্রান্ত রয়েছেন ১৪ জন।
অরেঞ্জ জোনের তালিকায় রয়েছে রাজ্যের মোট ১২টি জেলা। তার মধ্যে সবেচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছে হুগলি জেলায়। এই জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪১। সোমবার নতুন আক্রান্ত ১ জন। চিকিৎসার পর ছাড়া হয়েছে ৫ জনকে। মৃতের সংখ্যা ৪। সক্রিয় আক্রান্ত ৩২ জন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬। মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৬ জন। সক্রিয় আক্রান্ত ২৯ জন।
১৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। তার মধ্যে ৩ জন চিকিৎসায় সেরে উঠেছেন। কারও মৃত্যু হয়নি। সক্রিয় আক্রান্ত ১২।
পশ্চিম বর্ধমানে মোট করোনা আক্রাম্ত ১০। তার মধ্যে ৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মারা গিয়েছেন ২ জন। সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ৫।
নদিয়া জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮। তার মধ্যে ৬ জনই চিকিৎসায় সেরে উঠেছেন। কারও মৃত্যু হয়নি। সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ২।
পূর্ব বর্ধমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা মোট ৩। কারও মৃত্যু হয়নি। সুস্থও হননি কেউ। অর্থাৎ এখনও ৩ জনই সক্রিয় করোনা আক্রান্ত।
বীরভূমের করোনা-চিত্রও একই। ৩ জন আক্রান্ত। মৃত্যু ও সুস্থ নেই। সক্রিয় আক্রান্ত ৩ জন।
মুর্শিদাবাদে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২ জন। ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১ জন সক্রিয় আক্রান্ত রয়েছেন জেলায়।
মালদহ জেলাতেও ২ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কারও মৃত্যু হয়নি। ২ জনই সক্রিয় আক্রান্ত অর্থাৎ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫। তার মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন বাকি ৪ জন। কোনও সক্রিয় আক্রান্ত নেই এই জেলায়।
পাহাড়ের কালিম্পং জেলায় মোট ৭ জন আক্রান্তের মধ্যে ৬ জনই চিকিৎসায় ভাইরাসমুক্ত হয়েছেন। এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে সক্রিয় করোনা আক্রান্ত কেউ নেই।
দার্জিলিং জেলায় মোট ৬ জন আক্রান্তের সবাই সক্রিয় আক্রান্ত। কারও মৃত্যু হয়নি।
এ ছাড়া রাজ্যের দেওয়া তালিকায় ভিন রাজ্যের আক্রান্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে ১০ জনকে। অর্থাৎ অন্য রাজ্যের বাসিন্দা এ রাজ্যে এসে করোনাভাইরাসের সংক্রমিত হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের সবাই চিকিৎসাধীন রয়েছেন অর্থাৎ সক্রিয় আক্রান্ত।