Coronavirus in West Bengal

রাজ্যে কমছে মৃত্যুহার, কলকাতার বৃদ্ধিই চিন্তার

স্বাস্থ্য ভবনের খবর, কলকাতায় মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৬,৯৪৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩০১৮ জনের করোনা ধরা পড়েছে।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২০ ০৩:৫১
Share:

ছবি এএফপি।

রাজ্যের ২৩টি জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের নিরিখে গুণ-ভাগের হিসেব বলছে, বঙ্গে মৃত্যুর হার কমেছে। গত সপ্তাহে যা ছিল ৫.৩০%, মঙ্গলবারের পরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪.৬১%। সার্বিক ভাবে রাজ্যে মৃত্যুহার কমলেও স্বস্তি দিচ্ছে না কলকাতা! মহানগরে গত সপ্তাহে ওই হার ছিল ৭.৩৯%। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৮.৭৮%! মহানগরীতে মৃত্যুহারের এই ঊর্ধ্বমুখী দৌড়ই চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

Advertisement

স্বাস্থ্য ভবনের খবর, কলকাতায় মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৬,৯৪৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩০১৮ জনের করোনা ধরা পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মহানগরে আক্রান্তের সংখ্যা ১২৮, যা সর্বাধিক। এ দিনের পরে কলকাতায় টেস্ট পজ়িটিভিটির হার ১১.২০%। রাজ্যের মোট ৮৯৮৫ জন আক্রান্তের মধ্যে পুরুষ ৬৬৫৫, মহিলা ২৩৩০। তাঁদের মধ্যে ২৯০ জন পুরুষ (মৃত্যুহার ৪.৩৬%) এবং ১২৫ জন মহিলার (হার ৫.৩৬%) মৃত্যু হয়েছে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী করোনা পজ়িটিভ মৃত ৪১৫ জনের মধ্যে ২৬৫ জনই কলকাতার! বস্তুত, গুজরাতের আমদাবাদ, মহারাষ্ট্রের মুম্বই এবং মধ্যপ্রদেশের ইনদওরেও সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির বাকি জেলার তুলনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেশি। তবে ওই সব শহরেও কলকাতার তুলনায় মৃত্যুহার কম। মুম্বইয়ে মৃত্যুহার ৩.৩৯%, ইনদওরে ৪.১৪% এবং আমদাবাদে ৭.১০%।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন বলছে, গত এক মাসের বেশি সময়ে আমপানের দিন ছাড়া এ-পর্যন্ত এমন একটি দিনও নেই, যে-দিন কলকাতায় করোনা রোগীর মৃত্যু হয়নি। মৃত্যুর এই ধারাবাহিকতা চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। মৃত্যুর হার কী ভাবে কমানো যায়, সেই বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের বিশিষ্ট চিকিৎসকদের পরামর্শ চেয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

আরও পড়ুন: পরিযায়ী শ্রমিক ফেরাতে কোর্টের সময় ১৫ দিন

পালমোনোলজিস্ট রাজা ধরের মতে, সংক্রমণের ভয়ে উপসর্গ থাকলেও অনেকে হাসপাতালে আসতে চাইছেন না। এতে চিকিৎসার সময় নষ্ট হচ্ছে। তাঁর পরামর্শ, ‘‘আনলক পর্বেও বয়স্কদের জন্য পৃথক নির্দেশিকা দেওয়া উচিত।’’ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের বক্ষঃরোগের চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরীর মতে, কলকাতায় সিওপিডি, ডায়াবিটিসের মতো কো-মর্বিডিটিতে আক্রান্ত করোনা রোগীর মৃত্যুর ঘটনা বেশি। রোগীকে দেরিতে হাসপাতালে আনা এর গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তাঁর পরামর্শ, ‘‘রোগী যাতে ভেন্টিলেটরে না-যান, সেই চেষ্টা করতে হবে। তার জন্য নাকে নল ঢুকিয়ে অক্সিজেন দেওয়ার প্রক্রিয়া ছেড়ে এনআরবিএম (নন রিব্রেদার মাস্ক) ব্যবহার করা যায়। নাকে নল প্রক্রিয়ায় ১০-২০% অক্সিজেন রোগীর ফুসফুসে যায়। এনআরবিএম প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন পৌঁছনোর হার ৬০-৮০%। ফুসফুসের ক্ষতি রুখতে হাই-ফ্লো ন্যাজ়াল ক্যানুলার ব্যবহার বাড়ালে মৃত্যু ঠেকানো যেতে পারে।’’

মেডিসিনের চিকিৎসক শিবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, তুলনায় টেস্ট কম হওয়ায় আক্রান্তের হদিস মিলেছে কম। তাই মৃত্যুর হার অনেক বেশি মনে হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘টেস্ট বেশি হলে কেস বাড়বে। কেস বাড়লে মৃত্যুর হারও কমবে। টেস্ট বেশি হলে গোড়ায় রোগ ধরা পড়বে। ফলে মৃত্যুর আশঙ্কাও কমবে।’’ প্রাণহানি রোধে করণীয় কী? তিনি বলেন, ‘‘টেস্টিং, ট্র্যাকিং, আইসোলেশনের ধারণা থেকে বেরিয়ে তৈরি করতে হবে নতুন টেস্টিং প্রোটোকল। আনলকের মধ্যে সংক্রমণ রোধে সকলের ৯টা-৫টা ডিউটি করলে চলবে না। অনলাইনে কাজকর্মে উৎসাহ দিতে হবে। করোনা নিয়ে সামাজিক ভীতি কাটাতে হবে।’’

আরও পড়ুন: দিল্লিতে সংক্রমণ বাড়ছে, ভোগান্তিও

কোভিড ম্যানেজমেন্টে কলকাতা পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর উপদেষ্টা-চিকিৎসক শান্তনু সেন বলেন, ‘‘টেস্ট আমাদের অনেক বেশি হয়েছে। এখন পুর এলাকায় মাইক্রো সার্ভেল্যান্সের কাজ চলছে। তার সুফল কিছু দিনের মধ্যেই মিলবে। মৃত্যুর হারও কমবে। কলকাতার ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে সংক্রমণ কমেছে। এখন বেশির ভাগ কেসই হচ্ছে ফ্ল্যাটবাড়ি, বহুতলে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement