গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজ্যের করোনা পরিস্থিতিতে সোমবারের পুনরাবৃত্তি ঘটল মঙ্গলবারও। গত এক সপ্তাহ ধরে টানা দৈনিক আক্রান্তের থেকে দৈনিক সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটা বাড়ছিল। তাতে আশার আলো দেখছিলেন অনেকে। কিন্তু গতকাল আচমকাই উল্টো ছবি ধরা পড়ে। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। সেই দৃশ্য এ দিনও দেখা গেল। অর্থাৎ দৈনিক সুস্থের থেকে বেশি দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সঙ্গে এ দিনও মৃতের সংখ্যা ৬০-এর সামান্য নীচে গিয়ে থামল।
স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৩ হাজার ৯১ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গত কাল এই সংখ্যাটা ছিল ৩ হাজার ৭৭। এই নিয়ে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯৫৬। এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লক্ষ ৬০ হাজার ২৫ জন। তার মধ্যে এ দিন সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২ হাজার ৯৯৬ জন। এখন রাজ্যে সুস্থতার হার ৮৫.৬০ শতাংশ।
রাজ্যে এখনও পর্যন্ত সক্রিয় করোনা রোগী ২৩ হাজার ২৫৪ জন। এ দিনও সংক্রমিতের সংখ্যা ৩ হাজারের গণ্ডি ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে গত ২৩ অগস্টের পর রাজ্যে ‘অ্যাক্টিভ কেস’-এর গ্রাফটাও ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়ে গিয়েছে। গত কালকের থেকে এ দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ৩৮টি।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: বিজেপির রাজ্য কর্মসমিতিতে আনা হল শোভনকে
গত কাল মৃত্যু হয়েছিল ৫৮ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৭ জন। এই নিয়ে রাজ্যে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩ হাজার ৬৭৭।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশি সংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষায় শুরু থেকেই জোর দিয়ে আসছিল রাজ্য প্রশাসন। রবিবার রাজ্যে সর্বোচ্চ—৪৬ হাজার ৫০৫টি করোনা পরীক্ষা হয়। এ দিন অবশ্য তার চেয়ে কম সংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। মোট ৪২ হাজার ৩৮৮ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে প্রায় সাড়ে ২২ লক্ষ মানুষের করোনা পরীক্ষা হয়েছে।
প্রতি দিন যত জনের কোভিড টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যকের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। গত কয়েক দিন ধরে আক্রান্তের চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছিলেন বলে সংক্রমণের হারও ৬ শতাশের ঘরে ঘোরাফেরা করছিল। গত কাল তা বেড়ে হয়েছিল ৭.২৯ শতাংশ। এ দিনও সংক্রমণের হারে সেই একই চিত্র দেখা গিয়েছে।
দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে রাজ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। এ দিন সেখানে ৫৮১ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। এর পরেই রয়েছে কলকাতা। মহানগরীরে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ধরা পড়েছে ৩৮০ জনের। তবে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। কলকাতায় অবশ্য ‘অ্যাক্টিভ কেস’-এর সংখ্যা এ দিন কমেছে।
আরও পড়ুন: দিশা সালিয়ানের মৃত্যুর পরেই সুশান্ত কেন নষ্ট করেন হার্ড ডিস্ক, ফোন করেন আইনজীবীকে?
এ ছাড়া দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৪২, হুগলিতে ২১৭, হাওড়ায় ১০৬, পশ্চিম বর্ধমানে ১১৮, পূর্ব বর্ধমানে ১০৭, পূর্ব মেদিনীপুরে ২৯৮, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৭৫, বাঁকুড়ায় ১৩০, বীরভূমে ৭৯, নদিয়ায় ১৪৯ এবং মুর্শিদাবাদে ৯০ জনের করোনা ধরা পড়েছে এ দিন। হাওড়ায় ৬, হুগলিতে এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ৪ জন করে এবং নদিয়ায় ৩ জন রোগীর মৃত্যুও হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে ৮১, কোচবিহারে ৭২, দার্জিলিঙে ৯১, জলপাইগুড়িতে ৬৩, উত্তর দিনাজপুরে ৭৮ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে ৬৪ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এ দিন।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)