কোভিড নিয়ে কি আবার উদ্বেগ বাড়ছে? নিজস্ব ছবি।
দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা মঙ্গলবারের তুলনায় কমল রাজ্যে। কিন্তু উদ্বেগ কাটছে না। চিনের কোভিড পরিস্থিতি এবং তা নিয়ে কেন্দ্রের নড়েচড়ে বসা দেখে এ বার ‘অতিসক্রিয়’ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, সামনেই উৎসবের মরসুম। বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে কয়েক দিন পরেই ভিড় বাড়বে রাস্তা-রেস্তরাঁয়। তা নজরে রেখেই ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতর একটি নজরদারি কমিটিও গঠন করেছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারই বৈঠকে বসতে পারে ওই কমিটি।
স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, বেশ কয়েক দিন ধরে দশের নীচে ঘোরাফেরা করতে করতে পৌনে তিন বছর পর গত রবিবার রাজ্যে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নেমে গিয়েছিল। সোমবার এক জন আক্রান্তের হদিস মিললেও সেই সংখ্যাটা মঙ্গলবার বেড়ে সাত জনে ঠেকে। মৃত্যুও হয় এক জন কোভিড রোগীর। বুধবার অবশ্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে কোভিডে এক জন আক্রান্ত হয়েছেন। কোভিড পরীক্ষা হয়েছে ৪ হাজার ২৮৭ জনের। রাজ্যে বর্তমানে কোভিড পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৪০ জন। তাঁদের মধ্যে ২৪ জন বাড়িতেই নিভৃতবাসে রয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি ১৬ জন।
সম্প্রতি চিনে করোনা সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, শীঘ্রই ‘করোনা বিস্ফোরণ’ আছড়ে পড়তে পারে পড়শি দেশে। এই পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকারও। বুধবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে বসার কথা ছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয়ের। সেই সঙ্গে সব কোভিড পরিস্থিতিতে নজর রাখতে বলে ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ। বলেছেন, জাপান, আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজ়িল এবং চিনে সম্প্রতি যে ভাবে কোভিড বাড়ছে, তাতে সংক্রমিতদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে বিশেষ জোর দেওয়া দরকার। সংক্রমণ রোখার পাশাপাশি ভাইরাসের রূপগুলি কী ভাবে চরিত্র পাল্টাচ্ছে, তা নজরে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
এর পরেই বুধবার নবান্ন সভাঘরে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি পর্যালোচনা বৈঠকে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কোভিড পরিস্থিতির দিকে নজর রাখার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। চিনের বর্তমান পরিস্থিতির কথা শুনে বৈঠকে মমতা বলেন, ‘‘আমাদের স্বাস্থ্য দফতরকে একটু খবর রাখতে বলব। চিনে যে ভাবে ছড়াচ্ছে… যাঁরা এই রোগটি সম্পর্কে বোঝেন, তাঁদের নিয়ে একটি টিম গঠন করুন।’’ মুখ্যমন্ত্রীই জানিয়ে দেন, ওই দলে কারা কারা থাকবেন। বলেন, ‘‘ওই টিমটাকে নেতৃত্ব দেবেন স্বাস্থ্য সচিব। থাকবেন ডিএম, ডিএইচএসও।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পরেই কোভিড নজরদারি দল গঠন করে স্বাস্থ্য দফতর। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনেই ওই কমিটির মাথায় রাখা হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিবকে। এ ছাড়াও ওই কমিটিতে করোনা চিকিৎসার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন কোভিড বিশেষজ্ঞদের রাখা হবে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কোভিড পরিস্থিতির বিষয়টি নজরে ভবিষ্যতে কী কী নির্দেশিকা জারি করা যেতে পারে, ওই বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখার মতো নিয়মের উপর আবার জোর দেওয়া নিয়েও আলোচনা হতে পারে।