গ্রাফিক: নিরুপম পাল।
মাত্র ১৫ দিনেই রাজ্যে করোনার দৈনিক সংক্রমণ প্রায় ৩ গুণ লাফ দিয়ে ৮০০ ছাড়াল। ১২ মার্চ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৭৭। তবে ১৫ দিন পরে অর্থাৎ শনিবার রাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত বেড়ে ৮১২ হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতাতেই ২৯৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যার মতোই সংক্রমণের হারও একধাক্কায় ৩ শতাংশ ছাপিয়ে গিয়েছে। ২ জানুয়ারির পর চলতি বছরে এই প্রথম তা হয়েছে ৩.৩৩ শতাংশ।
চলতি বছরের প্রথম দিনে আক্রান্তের সংখ্যা হাজারের বেশি থাকলেও ফেব্রুয়ারির গোড়া থেকে তা ক্রমশই কমছিল। তবে ভোটের মরসুমে মিটিং-মিছিলে-জনসভায় করোনাবিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভিড় জমিয়েছেন প্রায় সব দলেরই নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা। তার জেরে চলতি মাসে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। ১ জানুয়ারি ১ হাজার ১৫৩ জনের আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। তবে পরের মাসে তা নিম্নমুখী হতে শুরু করেছিল। কিন্তু, চলতি মাসে তা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ১ মার্চ দৈনিক আক্রান্ত ছিল ১৯৮ জন। পরের দিন তা ২০০-র কোঠা পার করে। এর পর থেকে ক্রমশই গতি বাড়িয়েছে সংক্রমণ। ১৭ মার্চ ৩০৩ জনের দেহে এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। ২১ মার্চ তা ৪২২ হয়। মাত্র দু’দিন আগে ২৫ মার্চ আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫১৬ জন। তবে শনিবার তা ছাপিয়ে গেল ৮০০-র গণ্ডি।
আক্রান্তের পরিসংখ্যানের মতোই ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হারও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। জানুয়ারির প্রথম দিনে তা ছিল ২.৯৫ শতাংশ। তার পরের দিন ৩ শতাংশের গণ্ডি ছাড়ালেও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার মতোই তা কমছিল। তবে মার্চের দ্বিতীয় দিন থেকেই সেই হার ২ শতাংশের উপরে উঠতে শুরু করে। এখনও পর্যন্ত এর মোট হার দাঁড়িয়েছে ৬.৪৩ শতাংশ।
রাজ্যের বিধানসভার ভোটের প্রচারে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই করোনাবিধি ভেঙে জমায়েত দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি, মেট্রো বা ট্রাম-বাস-ট্রেনের মতো গণ-পরিবহণ কিংবা রাস্তাঘাট-দোকান-বাজারেও মুখোশহীন মানুষজনের ভিড় চোখে পড়ছে। এর জেরে করোনা পরিস্থিতি ফের বেলাগাম হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন।
সম্প্রতি স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধে এ দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শীর্ষে পৌঁছবে। সংক্রমণে রাশ টানতে প্রশাসনকে টিকাকরণে জোর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে। ঘটনাচক্রে, ওই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর এ রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকাকরণ ছাড়িয়ে গিয়ে ৩ লক্ষের বেশি হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ওই সময়ের মধ্যে ৩ লক্ষ ১৫ হাজার ৮০৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, এখনও পর্যন্ত ৪৬ লক্ষ ৮৮ হাজারেরও বেশি টিকা নিয়েছেন। তবে দৈনিক টিকাকরণ বাড়লেও এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লক্ষ ৮৩ হাজার ৮৩৯। এবং প্রতিদিনই তা দ্রুত গতিতে বাড়ছে।
কলকাতার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলাতেও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনায় ১৮০ জন নতুন সংক্রমিতের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া, হাওড়ায় ৬৫, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৪৬ এবং হুগলিতে ৪১ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
২৪ ঘণ্টায় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে গোটা রাজ্যে যে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ১০ হাজার ৩২২ জন কোভিড রোগী মারা গিয়েছেন।
দৈনিক টিকাকরণের মতোই কোভিড টেস্টের সংখ্যাও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টা ২৪ হাজারেরও বেশি কোভিড টেস্ট করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।