গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
করোনাবিধি নিয়ে আম জনতার ঢিলেঢালা মনোভাব যে কতটা ঘাতক হতে পারে, তা বোঝাচ্ছে রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। জানুয়ারির পর এই প্রথম তা একলাফে সাড়ে ৩০০-র ঘর পার করল। শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্য জুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫৭ জন। যা ২৪ জানুয়ারির পর সবচেয়ে বেশি। ওই দিন রাজ্যে ৩৮৯ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। স্বাস্থ্য দফতরের উদ্বেগ বাড়িয়ে কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের বেশ কয়েটি জেলাতেও দৈনিক সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী।
মহারাষ্ট্র-সহ দেশের কয়েকটি রাজ্যে করোনার সংক্রমণ রুখতে ফের কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। এ রাজ্যেও নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। গত ২৪ ঘণ্টায় এ রাজ্যে দৈনিক টিকাকরণের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এ যাবৎকালে ওই সময়ের মধ্যে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৩১৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৯ জন।
শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, এ শহরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৯৮১। এর মধ্যে সক্রিয় রোগী ১ হাজার ৩১৯ জন। কলকাতার মতোই দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে উদ্বেগ বাড়ছে উত্তর ২৪ পরগনা (৯৮), দক্ষিণ ১৪ পরগনা (২২), হাওড়া (২১), পশ্চিম বর্ধমান (১৯), পশ্চিম মেদিনীপুর (১৬), হুগলি (১৪) এবং নদিয়া (১৪) জেলা ঘিরে।
স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫ লক্ষ ৭৯ হাজার ৮৩৬-এ। তার মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫ লক্ষ ৬৬ হাজার ২২৮ জন। ফলে এই মুহূর্তে রাজ্যে ৩ হাজার ২৯৭ জন সক্রিয় রোগী রয়েছেন। যদিও বুধবার এবং বৃহস্পতিবার দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যাটা ৩০০-র বেশি। ফলে মাস্ক পরা বা শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে চলা অথবা বার বার হাত ধোওয়ার মতো করোনাবিধি মেনে চলার গুরুত্বের কথা ফের এক বার মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। প্রশাসনের কর্তা-সহ চিকিৎসকেরাও মেনে নিচ্ছেন যে করোনাবিধি লঙ্ঘন করলে মহারাষ্ট্রের মতো এ রাজ্যেও কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এক জন হাওড়াবাসীর মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১০ হাজার ৩০১ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন।
করোনা রুখতে এ যাবৎ ৩১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৩৫০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় দৈনিক কোভিড টেস্ট করা হয়েছে ২০ হাজার ৪২৫টি। এখনও পর্যন্ত মোট ৮৯ লক্ষ ১৫ হাজার ২১১টি টেস্ট করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর।
টিকাকরণ এবং কোভিড টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো হলেও সংক্রমণের মোট হার দাড়িয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। পাশাপাশি, দৈনিক সংক্রমণের হার বেড়ে পৌঁছেছে ১.৭৫ শতাংশে। প্রসঙ্গত, প্রতি দিন যে সংখ্যক কোভিড টেস্ট করা হয়, তার মধ্যে যত শতাংশের রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তাকেই ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। বৃহস্পতিবারের করোনা বুলেটিনে এই হার ছিল ১.৬৬ শতাংশে।