Coronavirus in West Bengal

উত্তর দিনাজপুর থেকে পুরুলিয়া, বুধবারও জেলায় জেলায় টিকা সরবরাহ অব্যাহত

স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, টিকা নিতে ইচ্ছুকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে, নাম যাচাই করে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। টিকা নেওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যে কোনও শারীরিক সমস্যা না হলে, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২১ ২৩:২১
Share:

—নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যে করোনা টিকা আসার দিনেই তা পৌঁছে গিয়েছিল বিভিন্ন জেলায়। বুধবারও টিকা সরবরাহের কাজ অব্যাহত।

Advertisement

রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, বুধবার কলকাতা থেকে পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, ঝাড়গ্রাম এবং পুরুলিয়ায় করোনার টিকা পাঠানো হয়েছে। আগামী শনিবার গোটা দেশের সঙ্গে একযোগে রাজ্য জুড়ে শুরু হবে টিকাকরণ। তার আগে জেলায় জেলায় পৌঁছচ্ছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা ‘কোভিশিল্ড’-এর ডোজ।

গোটা রাজ্যের মতোই পূর্ব বর্ধমানেও টিকাকরণের আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশেষ সুরক্ষার ঘেরাটোপে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসে পৌঁছয় করোনার টিকা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা মেনেই পূর্ব বর্ধমানের মোট ৩৯টি কেন্দ্রে টিকাকরণ হবে। জেলায় সব মিলিয়ে মোট সাড়ে ৩১ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। প্রথম দফায় তাঁদেরই টিকাকরণ হবে। টিকাকরণের প্রথম দিন, অর্থাৎ শনিবার জেলার ১৩টি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। প্রতি দিন ১০০ জনকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

Advertisement

আরও পড়ুন: পরীক্ষা কমলেও বাড়ল সংক্রমণের হার, অস্বস্তি উত্তর ২৪ পরগনা নিয়ে

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ, বর্ধমান শহরের ঝুরঝুরেপুলের পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ভাতার গ্রামীণ হাসপাতাল— জেলার এই তিনটি কেন্দ্রে টিকাকরণের সার্বিক মহড়া (ড্রাই রান) হয়ে গিয়েছে। জেলা প্রশাসনের আধিকারিক-সহ স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা ওই সার্বিক মহড়ার জন্য ব্যবহৃত কেন্দ্রগুলি ফের পরিদর্শন করেন। বুধবার সকালে ঝুরঝুরেপুল পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান জেলাশাসক এনাউর রহমান, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ সরকারি আধিকারিক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী। সেখানে ভ্যাকসিনপ্রাপক ২৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী উপস্থিত ছিলেন। অন্য দু’টি কেন্দ্রে আরও ২৫ জন করে স্বাস্থ্যকর্মী সার্বিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।

স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, টিকা নিতে ইচ্ছুকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে, নাম যাচাই করে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। টিকা নেওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যে কোনও শারীরিক সমস্যা না হলে, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা-সহ কোভিড বিধি মেনে চলা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

পূর্ব বর্ধমানের মতোই বুধবার টিকা সরবরাহ করা হয়েছে বীরভূমে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসে পুলিশি নিরাপত্তায় পৌঁছয় টিকা। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বীরভূম এবং রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার জন্য সাড়ে ১১ হাজার করে টিকা এসে পৌঁছেছে। ইনস্যুলেডে ভ্যানে করে ওই টিকা আসার সঙ্গে সঙ্গে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দফতরের কর্মীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে স্বাগত জানান টিকাগুলিকে।

পুরুলিয়ায় পৌঁছল করোনার ১৮ হাজার টিকা। —নিজস্ব চিত্র।

বীরভূমের মতোই টিকা নিয়ে একই উৎসাহ দেখা দিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলায়। বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ ওই জেলায় বহরমপুরে স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতরে আসে করোনার টিকা। সে সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বুধবার প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার ভ্যাকসিন আনা হয়েছে।

উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জেও কড়া পুলিশি ঘেরাটোপে পৌঁছেছে কোভিড টিকার ১৭ হাজার ডোজ। বুধবার সন্ধ্যায় রায়গঞ্জ মেডিক্যালের টিকা সংরক্ষণ কেন্দ্রে নির্ধারিত নিয়ম মেনে তা সংরক্ষণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-৩ গৌতম মণ্ডল বলেন, “রায়গঞ্জ মেডিক্যালের টিকা সংরক্ষণ কেন্দ্রে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে টিকার ডোজগুলি রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সমস্ত ব্লক এবং সরকারি হাসপাতালগুলিতে তা পাঠানো হবে।” আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে গোটা রাজ্যের সঙ্গে উত্তর দিনাজপুর জেলা জুড়ে প্রথম দফায় স্বাস্থ্যকর্মীদের ওই টিকা প্রয়োগের কাজ শুরু হবে।

স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ১৭ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন এলেও আপাতত প্রথম দফায় অর্ধেক ডোজ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও টিকা সরবরাহ হলে বাকি ডোজ প্রয়োগে অসুবিধা হবে না বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর।

আরও পড়ুন: করোনা-কালে রোগীর সেবা করেও বৈষম্যের অভিযোগ আয়ুষ ডাক্তারদের

রায়গঞ্জ ছাড়া উত্তরবঙ্গের আর এক জেলা মালদহেও পৌঁছেছে করোনার টিকা। বুধবার মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেই টিকা রাখা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, মালদহের প্রায় ১৯ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে প্রথম দফায় ১১ হাজার জনকে টিকা দেওয়া হবে।

বুধবার বিকেলে কলকাতা থেকে পুলিশি নিরাপত্তায় স্বাস্থ্য ভবনের একটি কন্টেনার গাড়িতে করোনার টিকা পৌঁছয় পুরুলিয়াতে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, রাঁচি রোডে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য দফতরের টিকা কেন্দ্রে বিশেষ তাপমাত্রায় ওই ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা হয়েছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিল দত্ত বলেন, “প্রথম দফায় জেলায় ১৮ হাজার ভ্যাকসিন এসেছে। শনিবার থেকে জেলার ২০টি ব্লক হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাকরণ হবেl ইতিমধ্যে তার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। দু’টি পর্বে এই টিকাকরণ চলবে। প্রথম পর্বে ২২৬টি টিকা কেন্দ্র থেকে জেলার ৯ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এর ২৮ দিন পর দেওয়া হবে দ্বিতীয় ডোজ।”

অন্যান্য জেলার মতোই বুধবার ঝাড়গ্রাম জেলায় পৌঁছেছে টিকার ডোজ। এই জেলায় ইতিমধ্যেই সাড়ে ৯ হাজার টিকা এসেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement