Coronavirus in West Bengal

ডাক্তারের জন্য ১৫ লক্ষ চাঁদা, হল না শেষরক্ষা

চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্ক ক্রমশ তলানিতে ঠেকছে বলে নানা সময়ে মানুষের অভিজ্ঞতায় উঠে এসেছে।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২০ ০২:৫৫
Share:

প্রদীপকুমার ভট্টাচার্য

ডাক্তারবাবুর চিকিৎসার জন্য চাঁদা তুলছিলেন পাড়ার লোক। এক রিকশাচালক ৭০ টাকা দিয়ে বলেন, ‘‘সামান্য টাকাটা নিতে অসুবিধা নেই তো? আসলে আমার এখন তেমন রোজগার নেই!’’ ‘প্রদীপ ডাক্তারের’ জন্য এমন বহু মানুষ এগিয়ে এসেছিলেন। কেউ টাকা পাঠিয়েছেন বিদেশ থেকে। পরিচিত একজন দিয়েছেন ১ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে গত তিন-চার দিনে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা চাঁদা উঠেছে। তবে শেষরক্ষা হয়নি। শ্যামনগরের করোনা আক্রান্ত চিকিৎসক প্রদীপকুমার ভট্টাচার্য সোমবার মারা গিয়েছেন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে।

Advertisement

চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্ক ক্রমশ তলানিতে ঠেকছে বলে নানা সময়ে মানুষের অভিজ্ঞতায় উঠে এসেছে। সেই আবহে প্রদীপ ডাক্তারদের মতো মানুষ ব্যতিক্রমী তো বটেই, বলছেন শ্যামনগরের মানুষ। তাঁদের অনেকেই জানালেন, করোনা-আবহে বহু চিকিৎসক যখন চেম্বার বন্ধ রেখেছেন, অনেকেই যদি বা বসছেন, রোগীকে দশ হাত দূরে বসিয়ে ছুঁয়েও দেখছেন না— সেই সময়ে প্রদীপ চলতেন নিজের খেয়ালে। বলতেন, ‘‘আমি যদি চেম্বার বন্ধ করে দিই, তা হলে এরা যাবে কোথায়? ’’ শ্যামনগর ফিডার রোডের বাড়ির কাছে নিজের সাদামাঠা চেম্বারে নিয়মিত বসতেন প্রদীপ। বন্ধুবান্ধব হয় তো বলেছেন, চেম্বারটা একটু ঝকঝকে করলে তো পারো। উত্তর দিতেন, ‘‘ঝকঝকে চেম্বারে গরিব লোক ঢুকতে ভয় পাবে।’’ স্থানীয় মানুষ জানালেন, রাতবিরেতেও এক ডাকে রোগী দেখতে ছুটতেন ডাক্তারবাবু।

পরিবার সূত্রের খবর, আরজিকর হাসপাতালের চাকরি বিশ বছর আগে ছাড়েন প্রদীপ। ঘনিষ্ঠদের বলতেন, ‘‘এলাকার লোকের চিকিৎসাই যদি না করতে পারলাম, তা হলে আর ডাক্তারি করে কী লাভ।’’ মাত্র আটান্ন বছর বয়সে এ হেন মানুষটির চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না শ্যামনগরের মানুষ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, দিন কয়েক আগে জ্বর আসে ডাক্তারবাবুর। করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। ১৫ জুলাই কলকাতার নার্সিংহোমে ভর্তি হন। প্রেসার, সুগার ছিল। মারা যান সোমবার। তাঁর স্ত্রী ও নবম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলেও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। দিন কয়েক আগে বাড়ি এসেছেন।

Advertisement

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement