ছবি: সংগৃহীত।
বাদ রইল না এসএসকেএমও! করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসায় এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক-সহ ১৪ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে কোয়রান্টিনে পাঠাতে হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। শনিবার মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ নবান্নে জানান, এ দিন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ জন। তবে সাত জন সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছেন। সব মিলিয়ে রাজ্যে এখন করোনা অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ১৭৮ জন। পাশাপাশি, দু’জনের মৃত্যু করোনায় হয়েছে বলে রাজ্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি জানানোয় এখন করোনায় মৃতের সংখ্যা ১০ থেকে বেড়ে হল ১২।
এসএসকেএমের ঘটনার সূত্রপাত বুধবার রাতে। সূর্য সেন স্ট্রিটের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই ব্যক্তিকে একটি বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে এসএসকেএমে ভর্তির জন্য নিয়ে যান তাঁর পরিজনেরা। হাসপাতাল সূত্রের খবর, রোগীকে প্রথমে জরুরি বিভাগে দেখানো হয়। এর পর ইমার্জেন্সি অবজারভেশন ওয়ার্ডে রোগীকে ভর্তি করে শুরু হয় চিকিৎসা। পর দিন বিকেলে রোগীকে ‘বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি’তে (বিআইএন) স্থানান্তরিত করানো হয়। স্থানান্তরিত প্রক্রিয়ায় ছিলেন হাসপাতালের সাপোর্ট স্টাফ। শ্বাসকষ্ট কমছে না দেখে রোগীকে সন্ধ্যায় কোভিড হাসপাতাল— এম আর বাঙুরে স্থানান্তরিত করানো হয়। সে দিনই রোগীর মৃত্যু হয়। এসএসকেএমের পাশাপাশি নাইসেডে ওই রোগীর নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। দুই পরীক্ষাগারের রিপোর্টে করোনা পজিটিভ হওয়ায় এসএসকেএমের আট জন চিকিৎসক, তিন জন নার্স এবং তিন জন সাপোর্ট স্টাফকে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে হাওড়া জেলা হাসপাতাল, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, আরজিকর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে আক্রান্তের সংস্পর্শে আসায় চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়রান্টিনে পাঠাতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা-প্রতিরোধের লক্ষ্যে অ্যান্টিবডি টেস্টে প্রাধান্য হটস্পটকেই
আরও পড়ুন: হাওড়ায় বাড়ি? ঢুকতে দিল না এনআরএস, যন্ত্রণা নিয়েই বাড়ি ফিরে প্রসব, সদ্যোজাত বাঁচল না
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীর মধ্যে চিকিৎসকেরা যাতে গুলিয়ে না ফেলেন সে জন্য জরুরি বিভাগে পিপিই পরে রোগী দেখার কথা বলা হয়েছে সরকারি নির্দেশিকায়। সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসারের পরামর্শের ভিত্তিতে রোগী ভর্তি হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে কি তার অন্যথা হয়েছিল?
যার প্রেক্ষিতে চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, ওই রোগীকে ভর্তি নেওয়ার প্রশ্নে ‘প্রভাবশালী মহল থেকে বিশেষ অনুরোধ’ ছিল। এসএসকেএমের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার রঘুনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘রাতে রোগীকে এনসেফ্যালাইটিসের রোগী ভেবে ভর্তি করা হয়েছিল। পর দিন চিকিৎসকদের মনে হয়, রোগীর স্নায়ুর সমস্যা রয়েছে। সন্ধ্যায় শ্বাসকষ্ট কিছুতেই কমছে না দেখে করোনা পরীক্ষা করানো হয়।’’
শুক্রবার সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরের পদস্থ কর্তার আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে এ দিন ১৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, সেই তালিকায় স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষ আমলা-সহ দফতরের কর্তারা রয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে সল্টলেক আমরিতে পাঠানো হয়েছে। আইডি-তে ভর্তি করোনা-আক্রান্ত এক শিশুকে নিয়েও স্বাস্থ্য দফতর চিন্তিত।
এ দিন নবান্নে মুখ্যসচিব জানান, হাওড়ায় ৫৮০টি নমুনা পরীক্ষার মধ্যে ৬২ জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ। যা প্রায় ১০ শতাংশ। পূর্ব মেদিনীপুরে ৩০০ জনের মধ্যে পজ়িটিভের সংখ্যা ১৮। মুখ্যসচিবের বক্তব্য, নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার পদক্ষেপ করছে। তার ফলও যে মিলছে তা বোঝাতে মুখ্যসচিব জানান, ২ এপ্রিলের পরে কালিম্পংয়ে আর কেস পাওয়া যায়নি। ৪ এপ্রিল থেকে জলপাইগুড়ির খাতাও শূন্য। পূর্ব মেদিনীপুরে শেষ কেস মিলেছে ১১ এপ্রিল।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)