Coronavirus in West Bengal

ডেঙ্গি-রুট ধরে করোনা, নজরে উঃ ২৪ পরগনা

কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গি বেগ দিয়ে চলেছে উত্তর পরগনার বিভিন্ন অঞ্চলকে। এ বার করোনাভাইরাস যেন তারই রাস্তায় নাস্তানাবুদ করতে চাইছে ওই জেলাকে!

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ ও সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২০ ০২:৫৮
Share:

উত্তর ২৪ পরগনায় সংক্রমণের যা গতিবিধি, তাতে তার কলকাতাকে ছাপিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ছবি: পিটিআই।

রোগ ধরা পড়েছে। চিকিৎসা চলছে। প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধও প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু রোগ কোনও মতেই সারছে না। ডেঙ্গি-রুট বরাবর উত্তর ২৪ পরগনায় করোনাভাইরাসের দাপাদাপি ক্রমশ জেলা প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের খবর।

Advertisement

কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গি বেগ দিয়ে চলেছে উত্তর পরগনার বিভিন্ন অঞ্চলকে। এ বার করোনাভাইরাস যেন তারই রাস্তায় নাস্তানাবুদ করতে চাইছে ওই জেলাকে! স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী মে মাসের শেষ সপ্তাহে উত্তর ২৪ পরগনায় করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ১১ দিনের ব্যবধানে পাঁচশো থেকে হাজারের ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু হাজার থেকে পনেরোশোর ঘরে পৌঁছেছে মাত্র আট দিনে! এক দিনে আক্রান্তের নিরিখে দিনের সংখ্যা যত বাড়ছে, ততই উদ্বেগ বেড়ে চলেছে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। সেই উদ্বেগের কারণ ব্যাখ্যা করে স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যে-জেলার জনসংখ্যা এক কোটির বেশি এবং কুড়িটির বেশি পুরসভা, সেখানে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে কী হতে পারে, তা তো ডেঙ্গিই দেখিয়ে দিয়েছে।’’

জেলায় করোনা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, আক্রান্তের পরিসংখ্যানে রাজ্যের করোনা-মানচিত্রে এখনও এগিয়ে রয়েছে কলকাতা এবং হাওড়া। রবিবারেই কলকাতায় ১৫৮ জন করোনা-আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীও আছেন। দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই করোনা-রোগীর সংস্পর্শে আসায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে অন্তত ২০ জন সংক্রমিত হয়েছেন। ফলে মহানগরী নিয়ে চিন্তা থাকছেই। কিন্তু সীমান্তঘেঁষা জেলা উত্তর ২৪ পরগনায় সংক্রমণের যা গতিবিধি, তাতে তার কলকাতাকে ছাপিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক চিকিৎসক-আধিকারিক স্মরণ করিয়ে দেন, ইতিমধ্যে করোনা-রোগীর প্রাণহানির সংখ্যায় হাওড়াকে (৬১) পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছে উত্তর ২৪ পরগনা (৭১)।

Advertisement

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত, গড়িয়া শ্মশানকাণ্ড নিয়ে ফের সরব রাজ্যপাল

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ব্যারাকপুর-কেন্দ্রিক এলাকায় করোনা প্রতিনিয়ত ডালপালা ছড়িয়ে চলেছে। পিছিয়ে নেই বিধাননগর পুর এলাকা। জেলার কন্টেনমেন্ট ‘এ’ জ়োনের তালিকার অর্ধেকের বেশি ব্যারাকপুর-কেন্দ্রিক এলাকায়। জেলার কোভিড-১৯ মানচিত্র বিশ্লেষণে কয়েকটি পুরসভার প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে আসছে। সেই তালিকার সামনের সারিতে রয়েছে কামারহাটি। জেলার ডেঙ্গি-মানচিত্রে স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত দক্ষিণ দমদমে করোনা

তার এলাকা বাড়িয়ে ফেলেছে। বরাহনগর নিয়েও স্বস্তিতে নেই জেলা প্রশাসন। টিটাগড়, ভাটপাড়া পুর এলাকাতেও সংক্রমণের গতি ঊর্ধ্বমুখী। বিধাননগর পুরসভার মধ্যে বাগুইআটি, রাজারহাট সংলগ্ন শহরাঞ্চল এলাকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। জেলার করোনা-বৈঠকে সেই প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

আরও পড়ুন: কেভেন্টার্সে তল্লাশিতে নথি, তাই আমলাদের ডাক: ইডি

জেলা প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, পরিযায়ী শ্রমিকদের কারণে জেলার অনেক গ্রামীণ ব্লক করোনা তালিকায় এলেও তা উদ্বেগজনক নয়। জেলার এক আধিকারিকের সংযোজন, ‘‘অন্যান্য রাজ্য থেকে ফেরা মানুষজনের বেশির ভাগই ইতিমধ্যে ১৪ দিনের সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যে করোনার কোনও উপসর্গ পাওয়া যায়নি। তাই অন্যান্য রাজ্য থেকে ফেরা মানুষজন এই জেলায় করোনা বৃদ্ধির কারণ বললে বাড়াবাড়ি হবে।’’

ব্যারাকপুর-কেন্দ্রিক এলাকায় সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশনস (সারি) রোগীদের চিহ্নিতকরণের বিষয়টি আরও সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট শিবিরের অনেকে। সূত্রের খবর, ওই এলাকায় ময়দানে লড়াই করা স্বাস্থ্যকর্মীদের ঠিকঠাক ‘গাইড’-এর অভাব রয়েছে বলে কোনও কোনও আলোচনায় উঠে এসেছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় দুই শতাধিক নার্সিংহোম রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে না-গিয়ে বহু রোগী অন্যত্র চলে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। ক্রিটিক্যাল রোগীদের হাসপাতালে আনার লক্ষ্যেই ‘সেফ হাউস’ তৈরির উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। জেলার ঘনত্ব, জনসংখ্যাও সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement