গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
উৎসবের দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এখনও পর্যন্ত এক দিনে সবচেয়ে বেশি জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াল রবিবার। রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত ৩ হাজার ৬১২ জন। এই নিয়ে টানা চার দিন কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা চলে গেল সাড়ে তিন হাজারের উপর। সব মিলিয়ে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কোভিড-আক্রান্তের সংখ্যা তিন লক্ষের কাছাকাছি।
পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বাড়লেও এ দিন কমেছে সুস্থতার হার। এই নিয়ে পর পর ছ’দিন। পাশাপাশি, করোনা সংক্রমণের জেরে এক দিনে মৃত্যুর সংখ্যা সামান্য কমলেও তা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে স্বস্তিতে দেওয়ার মতো নয়।
স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত রবিবারের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩ হাজার ৬১২ জন। দৈনিক পরিসংখ্যানের নিরিখে যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
আরও পড়ুন: পুজোর পরে সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কা, কোভিড-শয্যা বাড়ানোর নির্দেশ
চলতি বছরের ১৭ মার্চ এ রাজ্যে প্রথম কোভিড-রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। তার পর থেকে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও গত বৃহস্পতিবারের আগে কখনই তা সাড়ে তিন হাজারের গণ্ডি পেরোয়নি। গত বৃহস্পতিবার প্রথম সেই গণ্ডি অতিক্রম করে ৩ হাজার ৫২৬-এ পৌঁছয়। পরের দিন সেই সংখ্যাকেও ছাপিয়ে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫৭৩-এ। শনিবার তা বেড়ে পৌঁছয় ৩ হাজার ৫৯১-তে। এ দিন দেখা গিয়েছে আগেকার যাবতীয় রেকর্ড ভেঙেছে দৈনিক আক্রান্তের পরিসংখ্যান। সব মিলিয়ে এ রাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছুঁয়েছে ২ লক্ষ ৯৪ হাজার ৮০৬-এ।
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি রাজ্যে সুস্থতার হার বাড়ছে। এ দিন স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গোটা রাজ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন মোট ২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯৪৮ জন। ফলে এই মুহূর্তে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার ২৩৬। রাজ্যের কোভিড-চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত ২৭ অগস্ট থেকে এ রাজ্যে সুস্থতার হার ৮০ শতাংশের গণ্ডি পার করেছে। প্রথমে তা বাড়লেও গত ছ’দিনে ক্রমশ তা নিম্নমুখী। রবিবার তা দাঁড়িয়েছে ৮৭.৮৪ শতাংশে। গতকাল ছিল ৮৭.৮৬ শতাংশ।
সুস্থতার হার কমার পাশাপাশি অস্বস্তি বাড়িয়েছে সংক্রমণের হার বা পজিটিভিটি রেট। শনিবারের ৮.৩৮ শতাংশ থেকে বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ৮.৪৮ শতাংশে। প্রতি দিন যত জনের কোভিড টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত জনের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বলা হয়। এই হার যত নিম্নমুখী হবে, ততই স্বস্তিদায়ক।
স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় এ রাজ্যে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ হাজার ১১০ জন। পরিসংখ্যানের নিরিখে তা শনিবারের (৩ হাজার ৩২ জন) থেকে সামান্য বেশি। সুস্থতার হার স্বস্তি দিলেও উদ্বেগ বজায় রেখেছে মৃত্যুর সংখ্যা। এ দিন গোটা রাজ্যে মারা গিয়েছেন ৫৯ জন। শনিবারের চেয়ে (৬২ জন) তা অবশ্য সামান্য কম। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট ৫ হাজার ৬২২ জনের মৃত্যু ঘটল বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
আরও পড়ুন: বিপদসঙ্কেত! ‘কেরলের শিক্ষা না নিলে পুজোর পর করোনা-সুনামি’
করোনাভাইরাসের জেরে এ দিন রাজ্যে মৃতের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। গত ২৪ ঘণ্টায় ওই জেলায় মারা গিয়েছেন ১৮ জন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কলকাতায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। শনিবার কলকাতায় মৃতের সংখ্যা ছিল ২০। উত্তর ২৪ পরগনায় ১২। এ ছাড়া, হাওড়ায় ৬, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৪, পূর্ব মেদিনীপুরে ৪, দার্জিলিঙে ৪, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩, পশ্চিম বর্ধমান, দক্ষিণ দিনাজপুর, বাঁকুড়া ও বর্ধমানে ১ জন করে কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
এ রাজ্যে আক্রান্তের তালিকায় বরাবরই পাল্লা ভারী কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনার। এ দিন আক্রান্তের তালিকারও শীর্ষে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। ওই জেলায় সংক্রমিত হয়েছেন ৭৭৪ জন। দ্বিতীয় স্থানে কলকাতা। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এ শহরে মোট ৭৫৭ জনের মধ্যে নতুন করে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দৈনিক নতুন সংক্রমণ ১০০ পেরিয়েছে আরও ৮টি জেলায়— হাওড়া (২৮২), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (২০৩), হুগলি (১৭২), নদিয়া (১৩৪), মালদহ (১২৫), পশ্চিম বর্ধমান (১১৮) পূর্ব মেদিনীপুর (১১৭) এবং পশ্চিম মেদিনীপুর (১১০) জেলায়।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)