গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজ্যে সংক্রমণের পাঁচ মাসের মাথায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষের গন্ডি ছাড়াল মঙ্গলবার। এদিন স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৯৩১ জন। যার প্রেক্ষিতে ৯৮৪৫৯ থেকে রাজ্যের মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে এক লক্ষ ১ হাজার তিনশো নব্বই জন। গত চব্বিশ ঘণ্টায় কোভিড পজ়িটিভ রোগীর মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। লক্ষের গন্ডি অতিক্রম করার দিনই করোনায় আক্রান্ত বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের ভর্তি হওয়ার খবর মিলেছে।
তবে এরই মধ্যে স্বস্তির খবরও রয়েছে। একদিনে মোট আক্রান্তের সংখ্যার থেকে এদিনও চব্বিশ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যা বেশি। আক্রান্ত যেখানে ২৯৩১ জন সেখানে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩০৬৭ জন। সুস্থতার হার হল ৭২.৩৯ শতাংশ।
রাজ্যে করোনা সন্দেহভাজন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাতেও প্রতিদিন বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গিয়েছে। সোমবার চব্বিশ ঘণ্টায় মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ছিল ২৬২৯৭। এদিন তা বেড়ে হয়েছে ২৭০১৫। অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ‘কোবাস’এ নমুনা পরীক্ষার কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন নাইসেড অধিকর্ত্রী শান্তা দত্ত। প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার নমুনা পরীক্ষার ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্রটি চালু হলে একদিনে টেস্টের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাব্যক্তিরা।
আইডি হাসপাতাল সূত্রে খবর, এদিন সন্ধ্যায় শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত হয়ে মন্ত্রীকে সরকারি সংক্রামক রোগের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল ছেড়ে ডায়াবিটিসের শিকার মন্ত্রী হঠাৎ কেন আইডি’তে তা নিয়ে জল্পনাও তৈরি হয়েছে। যদিও হাসপাতাল সূত্রে তার কোনও সদুত্তর মেলেনি।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
সংক্রমণের মোট সংখ্যা বাদ দিলে এদিনের বুলেটিনে জেলাগুলির পরিসংখ্যানে খুব একটা হেরফের ঘটেনি। সম্প্রতি কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং মালদহের আক্রান্ত-মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
এদিনের বুলেটিন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় এ কদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৭১১ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্ত ৬৪৩, মৃত ৯। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে ২২০ এবং তিনজন। হাওড়ায় সেই সংখ্যা যথাক্রমে ১৫৬ এবং পাঁচজন। হুগলিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১৫, মৃত ৩। আক্রান্তের মাপকাঠিতে অন্য যে সকল জেলার সংখ্যা চোখে পড়ার মতো তা হল, নদিয়া (১২৭), পূর্ব মেদিনীপুর (১১২) এবং পশ্চিম মেদিনীপুর (৯৯)।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)