Coronavirus in West Bengal

রেড জ়োন নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদন বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে চিঠি দিয়ে জানান, পশ্চিমবঙ্গে ‘রেড জ়োন’-এর সংখ্যা চার থেকে বেড়ে হয়েছে ১০।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২০ ০৩:০৬
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে পত্রযুদ্ধের পরে এ বার করোনা-সংক্রমণের নিরিখে জ়োন ভাগ নিয়ে সংঘাত কেন্দ্র-রাজ্যের।

Advertisement

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদন বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে চিঠি দিয়ে জানান, পশ্চিমবঙ্গে ‘রেড জ়োন’-এর সংখ্যা চার থেকে বেড়ে হয়েছে ১০। অরেঞ্জ জ়োনের সংখ্যা ১১ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচে এবং গ্রিন জ়োনের সংখ্যা একই রয়েছে— আট। আর সে দিনই কেন্দ্রীয় মূল্যায়নকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবকে উত্তর দেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমার। সংশোধিত তালিকাও প্রকাশ করতে বলেছেন তিনি। তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে উল্লেখ করা হয়, বিবেক কুমারের চিঠি অনুযায়ী, রেড এবং অরেঞ্জ জ়োনে এ পর্যন্ত ‘কেস রিপোর্ট’ হয়েছে ৯৩১! অথচ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৭৯৫। সেই তথ্যও পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরই পাঠানো।

বৃহস্পতিবার ক্যাবিনেট সচিবের সঙ্গে রাজ্যগুলির মুখ্যসচিব এবং স্বাস্থ্য সচিবের ভিডিয়ো কনফারেন্স হয়। তার পরেই সব মুখ্যসচিবদের চিঠি পাঠিয়ে জ়োন বিভাজনের তথ্য-সহ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব জানান, এর আগে করোনা-আক্রান্তের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এবং সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার হারের নিরিখে জেলাগুলিকে হটস্পট বা রেড জ়োন, অরেঞ্জ ও গ্রিন জ়োনে ভাগ করা হয়েছিল। এখন করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। তাই আক্রান্তের সংখ্যা, আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার হার, করোনা-পরীক্ষা এবং নজরদারির তথ্যের উপর ভিত্তি করে জেলাগুলির জ়োনভিত্তিক পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে।

Advertisement

রেড জোন

কেন্দ্রীয় দাবি

• রাজ্যের ঘোষিত চারটি জেলা ছাড়াও কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদহ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা অরেঞ্জ জ়োন থেকে রেড জ়োনে নতুন অন্তর্ভুক্ত

রাজ্যের দাবি

• চার জেলা: কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং পূর্ব মেদিনীপুর

অরেঞ্জ জ়োন

কেন্দ্রীয় দাবি

• হুগলি, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ

রাজ্যের দাবি

• কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, দার্জিলিং, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদহ, হুগলি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা

গ্রিন জ়োন

কেন্দ্র-রাজ্যের তথ্য একই

• উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, কোচবিহার, পুরুলিয়া, আলিপুরদুয়ার এবং ঝাড়গ্রাম

স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রতিটি মাপকাঠির ভিত্তিতে জেলাভিত্তিক পর্যালোচনা করে নম্বর দেওয়া হয়েছে। যার ভিত্তিতে জেলাগুলির শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রের ওই নতুন মাপকাঠিতে যে-ভাবে রেড জোনে থাকা জেলার সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে, তা নিয়ে যে গতকালের বৈঠকেই আপত্তি জানিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ-মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলি, তা স্বীকার করে নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কেন্দ্র জানিয়েছে, নতুন নিয়মে সেই জেলাগুলিকেই গ্রিন জ়োনের আওতাভুক্ত ধরা হবে, যেখানে এখনও পর্যন্ত কোনও করোনা-আক্রান্ত নেই অথবা গত ২১ দিন ধরে কোনও ‘কেস’ রিপোর্ট হয়নি।

আরও পড়ুন: কালিম্পং রেড কেন, উঠছে প্রশ্ন

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবের চিঠির সঙ্গে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে এখন রেড জ়োনের সংখ্যা চার থেকে বেড়ে হয়েছে দশ। আগের চারটি রেড জ়োন জেলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদহ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এই জেলাগুলি এত দিন অরেঞ্জ জ়োন-এর আওতাভুক্ত ছিল। যদিও এই তথ্য মানছে না রাজ্য। তাদের দাবি, কেন্দ্রের স্থির করে দেওয়া মাপকাঠি অনুযায়ীই, রেড জ়োনের মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর রয়েছে। ফলে কেন্দ্রের এই মূল্যায়ন ‘ত্রুটিপূর্ণ’। তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব নিজের চিঠিতে জানিয়েছেন, এই তালিকা পরিবর্তনশীল। প্রতি সপ্তাহে সেই তালিকা সংশোধিত হবে। এ-ও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তৃণমূল স্তর থেকে পাওয়া সমীক্ষা এবং তথ্যের ভিত্তিতে রাজ্যগুলি কোনও নতুন এলাকাকে রেড বা অরেঞ্জ জ়োন-ভুক্ত করতে পারে। কিন্তু মন্ত্রকের স্থির করে দেওয়া রেড বা অরেঞ্জ জ়োনের তালিকা থেকে কোনও এলাকাকে শিথিল করতে পারবে না।

কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের সফর নিয়ে রাজ্য প্রশাসনে আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল। প্রশাসনের তরফে এ-ও বলা হয়, কেন্দ্রীয় দল বাস্তবসম্মত রিপোর্ট দেবে বলেই তাঁরা আশা করেন। সেই আবহে কেন্দ্রের এই তালিকায় ‘ক্ষুব্ধ’ শীর্ষ আমলারা। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, কালিম্পং এবং জলপাইগুড়িকে অরেঞ্জ থেকে রেড জ়োনের তালিকায় আনা হয়েছে। কিন্তু সেখানে থেকে আক্রান্তের শেষ তথ্য পাওয়া গিয়েছিল যথাক্রমে ২ এবং ৪ এপ্রিল। কেন্দ্রীয় মাপকাঠি অনুযায়ী, ২১ দিনের সময়সীমা এ ক্ষেত্রে পেরিয়ে গিয়েছে। ফলে কোন যুক্তিতে এগুলি লাল-তালিকাভুক্ত হল?

আরও পড়ুন: ‘গ্রিন’ বীরভূমেও মুম্বই যোগে করোনা-আক্রান্ত

এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন করা হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল শুক্রবার জানান, আগে কেবল কোন জেলায় কত রোগী রয়েছে বা সেখানে করোনা সংক্রমণের হার কত, তার ভিত্তিতে জোনের তালিকা করা হত। নতুন নিয়মে অনেকগুলি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে একটি হল, কত পরীক্ষা করা হয়েছে। হয়তো দেখা গেল, তলায় তলায় সংক্রমণ ছড়িয়েছে অথচ পরীক্ষা কম (বস্তুত যে অভিযোগ এত দিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে করে এসেছে বিরোধী দলগুলি এবং পশ্চিমবঙ্গের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে) হয়েছে বলে জানা যায়নি। এ ছাড়া, জনঘনত্বকে বিচার করা হয়েছে। কারণ, জনঘনত্ব বেশি হলে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনাও বেশি। তাই এখন সংক্রমণ কম হলেও ভবিষ্যতে যে জেলাগুলিতে সংক্রমণ ছড়ানোর পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের লাল তালিকায় রাখা হয়েছে।

রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অরেঞ্জ থেকে লাল-তালিকায় ঢুকে পড়া দার্জিলিং জেলায় শেষ কেস রিপোর্ট হয়েছে ২১ এপ্রিল। পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদহ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ২৮ এপ্রিল শেষ কেস পাওয়া গিয়েছে। সেগুলির ক্ষেত্রে ২১ দিনের সময়সীমা এখনও পেরোয়নি।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement