Mamata Banerjee

চালু হোক অভিন্ন টিকা নীতি: মুখ্যমন্ত্রী

এই বিষয়ে অভিন্ন নীতি তৈরির সঙ্গে সঙ্গে টিকার ঘাটতি মেটাতে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে তা আমদানি করার দাবিও সোমবার তুলেছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২১ ০৭:৪১
Share:

ফাইল চিত্র।

তৃতীয় তৃণমূল সরকারের নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই করোনা প্রতিষেধক নিয়ে সুর তীব্রতর করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিষয়ে অভিন্ন নীতি তৈরির সঙ্গে সঙ্গে টিকার ঘাটতি মেটাতে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে তা আমদানি করার দাবিও সোমবার তুলেছেন তিনি। মন্ত্রিসভায় এই বিষয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে এ দিনই বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্যের চাহিদা অনুযায়ী আপাতত দরকার তিন কোটি টিকা। দু’কোটি সরকারের হাতে রেখে বাকি এক কোটি বেসরকারি ক্ষেত্রে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কারণ, সরকারি ও বেসরকারি, উভয় ক্ষেত্র থেকেই টিকা নিচ্ছেন মানুষ। অথচ বহু বার চাওয়ার পরে রবিবার রাজ্যের কাছে এসেছে মাত্র এক লক্ষ প্রতিষেধক। তা দিয়ে মাত্র ৫০ হাজার মানুষের টিকাকরণ (দুই ডোজ়ের হিসেবে) সম্ভব। মমতা বলেন, “আমরা টিকা চাইছি। বলছি, দাও, আমরা কিনে নেব। আমি তো তিন কোটি চেয়েছি। দিয়েছে এক কোটি। টিকা তো আমরা তৈরি করি না। টিকা নিতে কেন্দ্রের অনুমতি লাগে। টিকা তারা নিজেদের (বিজেপি-শাসিত) রাজ্যগুলিতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমাদের দিচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকার যদি মনে করে তাদের কাছে টিকা নেই, ইতিমধ্যেই তা বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে, তা হলে অন্য যেখানে টিকা পাওয়া যায়, সেখান থেকে নিয়ে এসে আমাদের দেশের মানুষকে দেওয়ার দায়িত্ব তাদেরই।” ভোট-প্রচারেও মমতা অভিযোগ করেছিলেন, দেশে ব্যাপক ঘাটতি সত্ত্বেও অন্তত ৬৫% টিকা বিদেশে পাঠিয়েছে কেন্দ্র।

আগামী অন্তত ১৫ দিন সংক্রমণ বাড়বে বলেই আশঙ্কা রাজ্যের। এই অবস্থায় পুরোপুরি লকডাউন না-হলেও বিভিন্ন গতিবিধিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী ধর্মীয় প্রধান এবং বাজার কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। কোভিড মোকাবিলায় এলাকা ধরে ধরে রূপরেখা তৈরিতে প্রত্যেকের পরামর্শ নেন তিনি। সামনেই ইদ। গত বছরেও রেড রোডে ইদের বড় জমায়েত হয়নি। এ বারেও তা হবে না বলে সরকারকে জানিয়েছে রেড রোড কমিটি। গত বছরের মতো ভিডিয়ো-বার্তায় ইদের সময় আজান ও ঘরে বসে নমােজর বার্তা দিতে ইমামদের অনুরোধ করেন মমতা। তদারকির দায়িত্বে রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার। মমতা বলেন, “ধর্মাচরণ যার যার নিজের। উৎসব সবার। অনুরোধ সরকারি বিধি মেনে চলুন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কোভিড মোকাবিলা করব। একদম লকডাউন না-করেও যদি লকডাউনের মতো ব্যবহার বা আচরণ করা হয়, তা হলে ভাল হবে।”

Advertisement

মমতার সঙ্গে কথা হয়েছে দুর্গাপুজো ফোরামেরও। পুজো কমিটিগুলির যে-ক্লাব বা কমিউনিটি হল বা এমন যে-জায়গা আছে, সেখানে সেফ হোম বা অক্সিজেন বুথ তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার। আগে থেকে এলাকায় কোভিড মোকাবিলার উপযুক্ত প্রস্তুতি চালাতে ফোরামের প্রতিনিধিদের অনুরোধ করেছেন মমতা। রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, গুরুদ্বার এবং খ্রিস্টান প্রতিনিধিরাও সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। রবিবার কোভিড মোকাবিলার উপকরণ থেকে জিএসটি তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আর্জি জানিয়েছেন মমতা। জবাব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এ দিন মমতা বলেন, “অর্থমন্ত্রী বলেছেন, নিচ্ছেন না। কিন্তু সেটা ঘুরিয়ে বলেছেন। সরকারের অনেক টাকা। ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে সবার টিকাকরণ করতে পারে। তাই কেন্দ্রকে ভাবতে বলছি। দেশের টিকা বাইরে চলে গেলে তা এনে দিতে হবে। আর দরকার অক্সিজেন। একটা নীতি তৈরি করতে হবে। কেন্দ্র আর্থিক সাহায্য না করায় বেড, ভ্যাকসিন, অক্সিজেন, পরিকাঠামো, সবই আমাদের করতে হচ্ছে।”

মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ইন্টিগ্রেটেড কোভিড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইসিএমএস) চালু করেছে রাজ্য। পোর্টালের সঙ্গে একটি অ্যাপেও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, সেফ হোমে ভর্তির জন্য হেল্প ডেস্ক, খালি শয্যার সংখ্যা, অক্সিজেন, অ্যাম্বুল্যান্স, শ্মশান, কবরস্থান, সমাধিস্থলের তথ্য দেওয়া আছে। অক্সিজেনের বিষয়ে নজরদারির জন্য একটি অক্সিজেন ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেমও চালু হচ্ছে। সেটি আইসিএমএসের সঙ্গে যুক্ত হবে। দু’মাসের মধ্যে সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন জোগানের জন্য পিএসএ প্লান্ট বসানোয় জোর দেওয়া হয়েছে। এখনও ১৪ হাজারেরও বেশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিলিন্ডারকে মেডিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডারে পরিণত করা হয়েছে। দু’-এক দিনের মধ্যে আরও প্রায় ছ’হাজার ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিলিন্ডারকে মেডিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডারে পরিণত করা হবে। মুখ্যসচিব জানান, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর দিয়ে সাহায্য করছে। দেড় হাজার অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর ব্যবহার করা হচ্ছে। আরও ১৭০টি পাওয়া গিয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে আরও হাজার খানেক কনসেন্ট্রেটর আসছে। সরকার ইতিমধ্যেই ২১০টি ভেন্টিলেটর সংগ্রহ করে যে-সব জায়গায় বেশি দরকার, সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement