হাওড়ার বাঁধাঘাটে দাঁড়িয়ে জেলা স্বাস্থ্যকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। —নিজস্ব চিত্র।
দুপুর পর্যন্ত বসে থেকে অবশেষে করোনা পরিস্থিতি পরিদর্শনে বেরোলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা। বিকাল ৪টে নাগাদ হাওড়ার উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। তার আগেই অবশ্য কড়া ভাষায় রাজ্যকে দু’-দু’টি চিঠি ধরিয়েছেন তাঁরা। সেই চিঠি সামনে আসার পরই রাজ্য সরকারের তরফে এক প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের কাছে পৌঁছন। এর পরই বিএসএফ গেস্ট হাউস থেকে একসঙ্গে পরিস্থিতি পরিদর্শনে বেরোন সকলে।
প্রথমে হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামের কোয়রান্টিন সেন্টার পোঁছন তাঁরা। সেখান থেকে উলুবেড়িয়ার সঞ্জীবন হাসপাতালে যান। যদিও পরিদর্শনে যাওয়ার জন্য রাজ্যকে যে সম্ভাব্য জায়গাগুলির তালিকা ধরিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা, তাতে সঞ্জীবনের উল্লেখ ছিল না।
বৃহস্পতিবার রাজারহাট কোয়রান্টিন সেন্টার ঘুরে দেখেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। তার পরিদর্শন করেন বাঙুর কোভিড হাসপাতাল। এর পর শুক্রবার তাঁরা রাজ্য প্রশাসনকে দু'টি চিঠি পাঠিয়ে একাধিক খামতির কথা তুলে ধরেন তাঁরা। প্রতিনিধি দলের সূত্রে খবর, এ দিন উলুবেড়িয়ার এই সঞ্জীবন হাসপাতাল পরিদর্শনেও খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারেননি তাঁরা।
সঞ্জীবন হাসপাতাল থেকে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা যান বাঁধাঘাট পরিদর্শনে। সংক্রমিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত এই বাঁধাঘাটে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হেঁটে এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন তাঁরা। সেখানে দাঁড়িয়েই জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। করোনার মোকাবিলায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চান। আরও কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সে বিষয়েও পরামর্শ দেন জেলার আধিকারিকদের। সব শেষে সালকিয়াতেও ঘুরে দেখেন তাঁরা।
সকাল থেকে রাজ্যের প্রতিনিধি দলের অপেক্ষায় ঠায় বসে রয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত রাজ্যের তরফে কোনও প্রতিনিধিই তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে যাননি। কেউ তাঁদের আদৌ পরিস্থিতি পরিদর্শনে নিয়ে যাবেন কি না, সে নিয়েও রাজ্যের তরফে কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যকে দু’টি চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা। তাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একাধিক খামতির কথা তুলে ধরেন তাঁরা। তার পরেই রাজ্যের এক প্রতিনিধি তাঁদের কাছে পৌঁছন।
করোনা পরিস্থিতি পরিদর্শন নিয়ে শুরু থেকেই কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্য দ্বন্দ্ব চলছিল। তার পরেও দু’টি কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে এসে পৌঁছেছে, যার মধ্যে একটি রয়েছে কলকাতায়, অন্যটি রয়েছে শিলিগুড়িতে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যভবন থেকে প্রতিনিধি গিয়ে কলকাতায় প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে দেখাও করেন। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে রাজারহাট কোয়রান্টিন সেন্টার এবং বাঙুর হাসপাতালে পরিদর্শনেও যান। এ দিন সকালে কেন্দ্রীয় দলকে নিয়ে বেরনোর জন্য গুরুসদয় রোডে বিএসএফ-এর গেস্ট হাউসের বাইরে পাইলট কার তৈরি ছিল। বেরনোর জন্য প্রস্তুত ছিলেন পর্যবেক্ষকরাও।
কিন্তু রাজ্যের তরফে কেউই এ দিন সঙ্গে দেখা করতে যাননি। আদৌ কেউ যাবেন কি না, সেই বার্তাও পাঠানো হয়নি বলে অভিযোগ। গেস্ট হাউসের বাইরে কিছুটা দূর থেকে গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে কলকাতা পুলিশ। বালিগঞ্জ থানার বিশাল পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন রয়েছে সেখানে। তাঁদের মধ্য থেকেও কেউ কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে দেখা করতে যাননি।
দূরে দাঁড়িয়ে কলকাতা পুলিশের ভ্যান।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত ১৬৮৪ জন, দেশে মৃত ৭১৮
একই পরিস্থিতি শিলিগুড়িতেও। সেখানে সীমা সুরক্ষা বল (এসএসবি)-এর শিবিরে রয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা। প্রশাসনের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও, রাজ্যের তরফে কোনওরকম সহযোগিতা মেলেনি বলে অভিযোগ উঠছে। বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা কোথায় কোথায় যেতে চান, তা জানিয়ে রাজ্য সরকারকে আগেভাগেই একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তাতে হাসপাতাল, বাজারের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট ওয়ার্ডেরও উল্লেখ ছিল। তার পরেও রাজ্য সরকারের তরফে সহযোগিতা না মেলায় বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে রিপোর্ট দিতে চলেছেন তাঁরা। এর ফলে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কে জটিলতা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক মহলে।
আরও পড়ুন: নয়া সংক্রমণ বেশি কলকাতাতেই: মুখ্যসচিব
অবশ্য কেন্দ্রীয় দলের জন্য আর কিছু করার নেই বলে গতকালই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। নবান্ন থেকে তিনি বলেন, ‘‘যা সহযোগিতা করার করেছি। ওঁরা এলাকা ঘুরে দেখতে চেয়েছিলেন, দেখানো হয়েছে। স্বাস্থ্যসচিবের কাছে প্রেজেন্টেশন চেয়েছিলেন, তা-ও করা হয়েছে। এর পর আমাদের তরফে আর কিছু দেওয়ার নেই। আরও তথ্যের দরকার পড়লে ওঁরা ই-মেল করতে পারেন।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)