ছবি: সংগৃহীত।
এত পজ়িটিভ কেন! করোনা নির্ণয়ে ‘কোবাস ৮৮০০’ যন্ত্রের দক্ষতায় এ ভাবেই ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করে আইসিএমআর-নাইসেড কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন। পত্রপাঠ তা খারিজ করে আইসিএমআর-নাইসেড কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তাদের সন্দেহ অমূলক। কিন্তু কিট বিতর্কের স্মৃতিকে উস্কে দিয়ে সেখানেই বিষয়টি থেমে থাকেনি। নাইসেড সূত্রে খবর, দু’পক্ষের তরফে পরস্পরের উদ্দেশে পত্রবোমা বর্ষণের পরে নাইসেডে নমুনা পাঠানোর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমিয়ে দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কলকাতার কয়েকটি হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পশ্চিম বর্ধমান থেকে প্রতিদিন হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষার জন্য নাইসেডে পাঠানো হত। প্রতিদিন তিন হাজার নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম ‘কোবাস ৮৮০০’ এ রাজ্যে সক্রিয় হওয়ার পরে সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখ ১৪৫২টি নমুনার মধ্যে ৩৪৫ জনের (২৩.৭৬ শতাংশ) করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। ১২ সেপ্টেম্বর ১৩৯৮টি নমুনার মধ্যে পজ়িটিভের সংখ্যা ছিল ৩৭৯ (২৭.১১)। পরের দিন ১১৫৭টি নমুনার মধ্যে ৩৬৬টি (৩১.৬৩ শতাংশ) পজ়িটিভের সন্ধান মেলে। ঘটনাচক্রে, এরপরই নাইসেডে চারটি জেলা থেকে নমুনা পাঠানোর সংখ্যা কার্যত শূন্য হয়ে গিয়েছে বলে খবর। গত ১৬ সেপ্টেম্বর চব্বিশ ঘণ্টায় মাত্র ৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে নাইসেডে। পরবর্তী চারদিন চব্বিশ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা হল যথাক্রমে ৮১, ৭৫, ৭৪ এবং ২০! নাইসেড সূত্রের খবর, ১৭ সেপ্টেম্বর চার জেলা থেকে একটিও নমুনা পাঠানো হয়নি। পরদিন ৭৫টি নমুনার মধ্যে হুগলি জেলা থেকে মাত্র ৬টি নমুনা পাঠানো হয়।
স্বাস্থ্য ভবনের শীর্ষ কর্তাদের একাংশের বক্তব্য ছিল, সংগৃহীত নমুনায় ভাইরাসের অস্তিত্ব খোঁজার প্রশ্নে কোবাসের স্পর্শকাতরতা (সেনিটিভিটি) অনেক বেশি বলে তাঁদের মনে হচ্ছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনের শীর্ষ কর্তার তরফে নাইসেড অধিকর্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানানো হয় বলেও খবর। যন্ত্রের দক্ষতা নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে আইসিএমআরের পোর্টালে তৎক্ষণাৎ যাতে রিপোর্ট আপলোড না করা হয় সে বিষয়ে অনুরোধও আসে। নাইসেডের আধিকারিকদের একাংশ জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য দফতরের অনুরোধ রক্ষা করতে গিয়ে অনেক কেস পোর্টালে তোলা হয়নি। পরবর্তী ক্ষেত্রে একসঙ্গে একদিনে এত কেন কেস পোর্টালে দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে টানাপড়েনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়।
আরও পড়ুন: ‘ভূতের দলে’ সর্ষেই সাফল্যের কারণ?
আরও পড়ুন: ‘আমার পোলাটা তো সব সময় আতিউরের সঙ্গে ঘুরত, ওর কী হবে গো!’
কোবাস প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোবাসে গন্ডগোল হচ্ছে বলেই মনে করি। একসময় রাজ্যের বেসরকারি ল্যাবগুলিতেও মোট নমুনা পরীক্ষার ৩০ শতাংশ পজ়িটিভ আসছিল। প্রতি দশ জনে তিনজন পজ়িটিভ হওয়ার মতো সংক্রমণের হার আমাদের রাজ্যে নেই। অন্য কোনও ল্যাবে যখন এই সমস্যা নেই তার মানে কিটে সমস্যা রয়েছে।’’
নাইসেড অধিকর্ত্রী শান্তা দত্ত সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির কিট’কে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ধরে যন্ত্রটি আইসিএমআর ভ্যালিডেট করেছে। দক্ষতার মাপকাঠিতে সেই ম্যাচিং ছিল একশো শতাংশ। তাই কোবাসে কোনও সমস্যা নেই।’’