শ্রীপতি ন্যায়বান। নিজস্ব চিত্র
দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। চোখের চিকিৎসার জন্য দু’বার অস্ত্রোপচার করতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে তাতে রাজি হননি। বক্তব্য ছিল, অস্ত্রোপচার কক্ষে ছেলেরা নেই। তাই অস্ত্রোপচার করাবেন না। ৯৯ বছরের সেই বৃদ্ধই করোনাকে পর্যুদস্ত করে এ রাজ্যের প্রবীণদের ভরসা জোগালেন। কাঁকুড়গাছির বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন রাজ্যের প্রবীণতম করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধ শ্রীপতি ন্যায়বান বুধবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধের দুই ছেলেও করোনার শিকার। ৭২ বছর বয়সি বড় ছেলে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি রয়েছেন। ৫৩ বছর বয়সি আর এক ছেলে মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর আগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসায় ৯৪ বছরের করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধ সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ৯৯ বছর বয়সি কেউ করোনাকে পর্যুদস্ত করেছেন, গত সাড়ে তিন মাসে এমন কোনও নজির নেই বলেই মনে করছেন সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকেরা।
বৃদ্ধের পঞ্চম পুত্র কনক জানান, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁর দাদার পরিবারের মধ্যে প্রথম কোভিড ধরা পড়ে। নিউমোনিয়ার উপসর্গ নিয়ে গত ১১ জুন রাতে তাঁকে মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চার দিন পরে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। জুনের ২১ তারিখ পরিবারের বড় ছেলে উপসর্গ নিয়ে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁরও করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। কনকবাবুর করোনা পরীক্ষা করানো হলেও ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি।
দুই সন্তান আক্রান্ত হওয়ার মধ্যে গত সপ্তাহে অসুস্থ বোধ করেন বৃদ্ধ। গত ২৪ জুন তাঁর নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। বৃদ্ধের মৃদু হাইপারটেনশন ছিল। শীর্ণকায় শরীরে অক্সিজেনের মাত্রাও স্বাভাবিকের থেকে কম ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এই অবস্থায় বৃদ্ধকে ডায়মন্ড হারবার থেকে কাঁকুড়গাছির বেসরকারি নার্সিংহোমে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে প্রায় সপ্তাহখানেক চিকিৎসাধীন থাকার পরে এ দিন তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়।
বেসরকারি নার্সিংহোমের কর্ণধার তথা চিকিৎসক সৌম্যদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘করোনার ক্ষেত্রে সব থেকে জরুরি ঠিক সময়ে রোগীকে হাসপাতালে আনা। অনেক সময় রোগীকে বাড়িতে ফেলে রাখা হচ্ছে। হাসপাতালে যখন আনা হচ্ছে তখন আর করার কিছু থাকছে না। সময়ে হাসপাতালে এলে ৯৯ বছরের বৃদ্ধকেও করোনা থেকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।’’
আরও পড়ুন: রোগীর খবর বাড়িতে জানায় চিকিৎসকের দল
কেমন আছেন? মুখে একগাল হাসি নিয়ে বৃদ্ধ বলেন, ‘‘ভালো বোধ করছি। শরীরে এখন কোনও অসুবিধা নেই।’’ বৃদ্ধের ছেলে জানান, প্রথম জীবনে সেনাবাহিনীতে ছিলেন বাবা। পরে বাহিনী ছেড়ে সিভিল কোর্টে করণিকের পেশায় যুক্ত হন। তাঁর কথায়, ‘‘করোনা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু এই রোগ হলে যে ভাবে সামাজিক বয়কট করা হচ্ছে তা ঠিক নয়। বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না, বাজারে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ধরনের ঘটনায় শারীরিক অসুস্থতার থেকেও মনের উপরে খুব চাপ পড়ে।’’
আরও পড়ুন: করোনা-আঁধারে আফ্রিকা, তবু খুলে গেল পিরামিড