ছবি পিটিআই।
নতুন করে আক্রান্তের তুলনায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যা বেশি। করোনা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে মঙ্গলবার তাই কিছুটা স্বস্তিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবনের চিন্তা বাড়িয়েছে এসএসকেএমের ‘ইনস্টিটিউট অব ওটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি’র প্রবীণ চিকিৎসকের শারীরিক পরিস্থিতি। করোনা-পীড়িত ওই চিকিৎসকের শারীরিক অবস্থা উদ্বেগজনক বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানান, রাজ্যে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১০ জন। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে ১১৩ জন বাড়ি ফিরেছেন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০৬৩ থেকে বেড়ে ২১৭৩ হলেও অ্যাক্টিভ কেস ১৩৭৪ থেকে কমে হয়েছে ১৩৬৩। সুস্থতার হার এক ধাক্কায় ২৪.১৯% থেকে বেড়ে ২৮.১৬% হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে আট জনের (কলকাতার ছয়, হাওড়ার এক, উত্তর ২৪ পরগনার এক জন)। এই নিয়ে সরাসরি করোনায় মৃতের সংখ্যা হল ১২৬। কো-মর্বিডিটিতে মৃত ৭২ জনকে ধরলে করোনা পজ়িটিভ মোট ১৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজ্যে। স্বরাষ্ট্রসচিব জানান, বঙ্গের পথে এখন বহু রাজ্য কো-মর্বিডিটির মাপকাঠিতে অডিট কমিটি চালু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলা করলে সব ভুল। আর অন্যেরা করলে?’’ ৪ মে-র পরে যে আর কো-মর্বিডিটিতে মৃত্যুর হিসেব দেওয়া হয়নি, সে-কথা জানালে মমতা বলেন, ‘‘আবার দেওয়া হবে।’’
নমুনা পরীক্ষায় বাংলা যে পিছিয়ে নেই, তা বোঝাতে স্বরাষ্ট্রসচিব জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০০৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। সোমবার যা ছিল ৪২০১। এক দিনে ৮০৬টি পরীক্ষা হয়েছে। এ-পর্যন্ত মোট পরীক্ষার সংখ্যা ৫২,৬২২।
আরও পড়ুন: মোদীর স্বদেশি আত্মনির্ভরতার ডাকেও সংশয় অনেক
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অন্যান্য রাজ্যে যখন ৪০-৫০টা ল্যাব, তখন আমাদের ছিল মাত্র চারটে। এটা আমাদের দোষ নয়। মাত্র কয়েক দিনে দু’হাজার থেকে ৫২ হাজারে এসেছি।’’ রাজ্যে মোট ৬৮,১৯৯ জন গৃহ-নিভৃতবাস থেকে ছাড়া পেয়েছেন বলে জানানো হয় বুলেটিনে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা বড় ক্রেডিট। আমরা রোগটা নিয়ন্ত্রণে রেখেছি, এটা মাথায় রাখবেন।’’
কলকাতায় ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৩৯ জন, হাওড়ায় ৩৭। উত্তর ২৪ পরগনায় ১৫, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নয়, মালদহে ছয়, হুগলিতে দুই, পূর্ব মেদিনীপুরে দুই এবং পূর্ব বর্ধমানে এক জনের নাম আছে আক্রান্ত-তালিকায়।
কলকাতার আক্রান্তদের মধ্যে আছেন এসএসকেএম হাসপাতালের প্রবীণ চিকিৎসক। গত বছর রাজ্যের ‘চিকিৎসক সম্মান’ পাওয়া ওই চিকিৎসক সেপ্টিসিমিয়ার কারণে এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রক্তচাপ কম ছিল। করোনা ধরা পড়ায় মঙ্গলবার রাতে তাঁকে সল্টলেকের কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, জ্বর থাকলেও তাঁর শ্বাসকষ্ট নেই। বয়সের কথা ভেবেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাঁকে আইসিইউয়ে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: এত রকমের ছাড়েই শিকেয় লকডাউন, ক্ষুব্ধ পুলিশমহল
গার্ডেনরিচ শিল্প বিল্ডার্সে কর্মরত ২১ জন সিআইএসএফ জওয়ান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, করোনা পজ়িটিভ এক জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। লকডাউনে কাজ চলাকালীন কিছু শ্রমিক সিআইএসএফ জওয়ানদের সঙ্গে ক্যান্টিনে খেয়েছিলেন। সেই থেকে সংক্রমণের সূত্রপাত বলে সংস্থা সূত্রের খবর। আক্রান্তদের সংস্পর্শ-যোগে লালারসের নমুনা পরীক্ষার তালিকা দীর্ঘতর হবে। এক করোনা-আক্রান্ত রোগিণীর সংস্পর্শে আসায় নমুনা পরীক্ষার জন্য চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেও ১০ জনের বেশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর তালিকা তৈরি হয়েছে। আরজি কর ফাঁড়ির এক কনস্টেবল করোনায় আক্রান্ত হয়ে আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।