গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজ্যে এই প্রথম এক দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল ৩ হাজার। মৃত্যুও হল ৬০ জনের। তবে সুস্থতার হার আরও বেড়েছে। টেস্টের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৩০০ বাড়লেও বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার নতুন আক্রান্ত বেড়েছে মাত্র ৩৮ জন। ফলে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার কমেছে। এই দুই ক্ষেত্রই রাজ্য প্রশাসনের কাছে স্বস্তিদায়ক। ফলে করোনা যুদ্ধে আশার আলো দেখছেন চিকিৎসক-গবেষকরাও।
শুক্রবার রাতে স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন ৩ হাজার ৩৫ জন। এই নিয়ে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লক্ষ ১০ হাজার ৩৫৮। বৃহস্পতিবারের বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৯৯৭ জন।
অন্য দিকে দুশ্চিন্তা বাড়ছে মৃত্যু নিয়েও। শুক্রবারের বুলেটিনে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬০ জনের। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ৫৬। সব মিলিয়ে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩১৯। এর মধ্যে কলকাতায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৬ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছেন ২১ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় মৃত্যু হয়েছে ৫৪০ জনের, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মারা গিয়েছেন মোট ১২৬ জন, হাওড়ায় ২৮১ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতাতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী মহানগরে নতুন করে কোভিড সংক্রমিত হয়েছেন ৬১৫ জন। এই নিয়ে কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ৩১ হাজার ৮৫ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় মোট আক্রান্ত ২৩ হাজার ৪৬৭ জন (নতুন সংক্রমিত ৬০৬ জন)। হাওড়ায় ২৪ ঘণ্টায় কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ২১৮ জনের, মোট আক্রান্ত ১০ হাজার ৮১৯ জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৮ হাজার ১৩৩ জন মোট আক্রান্ত। তার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমিত হয়েছেন ২৫৪ জন।
আরও পড়ুন: আপাতত চালু হচ্ছে না প্রতি দিন ৩ হাজার নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম ‘কোবাস’
তবে আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা বাড়লেও সুস্থতার হার বৃদ্ধিও করোনা যুদ্ধে আশা জাগাচ্ছে রাজ্য প্রশাসনকে। শুক্রবারের বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে সুস্থতার হার ৭৩.৫৭ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সেই হার ছিল ৭৩.২৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২ হাজার ৫৭২ জন। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৯৭ জন। সব মিলিয়ে রাজ্যে মোট সুস্থ হয়েছেন ৮১ হাজার ১৮৯ জন করোনা আক্রান্ত রোগী। এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছেন ২৬ হাজার ৮৫০ জন। উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃহস্পতিবারও সংখ্যাটা একই ছিল।
রাজ্য প্রশাসনের স্বস্তি বাড়ছে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হারেও। প্রতি দিন যত জন রোগীর কোভিড-টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যক রোগীর কোভিড-রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকেই ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। বুধবারের বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে এই সংক্রমণের হার ছিল ১০.৫৯ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সেই হার কমে দাঁড়ায় ৯.৯৮ শতাংশ। শুক্রবার তা আরও কমে হয়েছে ৯.৬৯ শতাংশ। পরিসংখ্যান বলছে, গত এক মাসেরও বেশি সময়ে কখনও এতটা কমেনি।
আরও পড়ুন: পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, ভারতের করোনা টিকা ‘নিরাপদ’, বলছেন বিজ্ঞানীরা
অন্য দিকে শুক্রবারের বুলেটিনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনার পরীক্ষা হয়েছে ৩১ হাজার ৩১৭ জনের। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ৩২। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় টেস্ট বৃদ্ধির সংখ্যা ১২৮৫। কিন্তু বৃহস্পতিবারের পরিসংখ্যানের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, আক্রান্ত বেড়েছে ৩৮ জন। তার জেরেই সংক্রমণের হার কমায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)