প্রতীকী ছবি।
প্রতীক্ষার পর্ব কমে আসছে। আজ, মঙ্গলবারই পুণের সিরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন পশ্চিমবঙ্গে আসছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। এ দিন তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুরেই পুণে থেকে এ রাজ্যে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ৬৮ হাজার ৯০০ ভায়াল আসছে। তাতে ৬.৮৯ লক্ষ ডোজ় দেওয়া সম্ভব হবে। সোমবার বিমানবন্দর সূত্রেও পুণে থেকে ভ্যাকসিন আসার খবর জানা গিয়েছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই প্রতিষেধক বিমানে কলকাতায় পৌঁছনোর পরে তার একাংশ স্বাস্থ্য দফতরের ইনসুলেটেড ভ্যানে নিয়ে যাওয়া হবে বাগবাজারের কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল স্টোর্সে। সেখান থেকে শহর ও জেলা মিলিয়ে ৯৪১টি ‘কোল্ড চেন পয়েন্টে’ তা পৌঁছে যাবে। বাকি ভ্যাকসিন বিমানবন্দর থেকে যাবে হেস্টিংসে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল স্টোর্স ডিপো’ বা জিএমএসডি-তে। সেখান থেকে প্রতিষেধক চলে যাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের অসম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর এবং অন্যান্য জায়গায়।
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে শ্বাসকষ্ট বা অ্যালার্জির মতো উপসর্গ দেখা দিলে পুরনো অভিজ্ঞতা অনুযায়ী অ্যাড্রিনালিন ইঞ্জেকশন দিতে হবে। চিকিৎসকেরা জানান, সব ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এটাই নিয়ম। ভ্যাকসিন দেওয়ার সব জায়গায় ওই ইঞ্জেকশন রাখা হয়। এটাও তেমনই রুটিন বিষয়। তবে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে কারও কোনও সমস্যা দেখা দিলে প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করতে হবে, ঠিক কোন কোন উপসর্গের ভিত্তিতে কী চিকিৎসা হয়েছে। সব নথি জমা পড়বে স্বাস্থ্য ভবনে। প্রতিটি ভ্যাকসিন কেন্দ্র থেকে ওয়েবকাস্টিংয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ থাকবে স্বাস্থ্য ভবন এবং আইসিএমআরের সঙ্গে। অ্যাম্বুল্যান্স রাখতে হবে সব ভ্যাকসিন কেন্দ্রে। শুক্রবার চালু হয়ে যাবে জরুরি হেল্পলাইন। নম্বর: ১০৪ এবং ১০৭৫।
রাজ্যের প্রতিষেধক-ব্যবস্থা
• কোল্ড-চেন ৯৪১টি
• প্রতিষেধক প্রদানকারী ৪৪ হাজার
• প্রথম ফেজ়ে চার হাজার প্রতিষেধক দেওয়ার কেন্দ্র
• একেকটি কেন্দ্রে প্রক্রিয়ার দেখভালে চার জন ভ্যাকসিনেটর অফিসার
• সরকারি এবং বেসরকারি ৫.৮ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী তালিকাভুক্ত
• তালিকাভুক্ত ২.৫ লক্ষ পুলিশ এবং ১.১২ লক্ষ পুরকর্মী
‘‘বিমানবন্দর থেকে বাগবাজারে কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল স্টোর্সে প্রতিষেধক নিয়ে যাওয়া, সেখান থেকে তা জেলায় পাঠানোর প্রস্তুতি সম্পূর্ণ,’’ সোমবার বলেন অজয় চক্রবর্তী। স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, বিমানবন্দর থেকে ‘ভিআইপি’ ভ্যাকসিনের আড়াই ফুট বাই দু’ফুট বাই দু’ফুট মাপের বেশ কয়েকটি বাক্স তোলা হবে দু’টি ভ্যানে। বাক্সে ‘ড্রাই আইস’ বা শুকনো বরফের মধ্যে তা রাখা হবে। দু’টি ভ্যানে সর্বাধিক ৪২টি বাক্স তোলা সম্ভব। তবে কোন গাড়িতে প্রতিষেধকের ক’টি বাক্স তোলা হবে, তা এখন চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান আধিকারিকেরা।
আরও পড়ুন: কেবল দু’টি প্রতিষেধককেই কেন বাছা হল? মোদীকে প্রশ্ন মমতার
স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানা গিয়েছে, তাদের পরিবহণ শাখার অধীনে চারটি ইনসুলেটেড ভ্যান আছে। তার মধ্যে দু’টি বিমানবন্দরে থাকবে, প্রস্তুত রাখা হবে অন্য দু’টি ইনসুলেটেড ভ্যানকেও। বাগবাজারে প্রতিষেধক পৌঁছনোর পরে তা প্রতিটি জেলার রিজ়ার্ভ স্টোর্সে পাঠানোর কাজ শুরু হবে। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ভ্যাকসিন-ভ্যানেই তা পাঠানো হবে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায়। তবে দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলা থেকে ভ্যাকসিন-ভ্যান বাগবাজারে এসে প্রতিষেধক নিয়ে যাবে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা জানান। সব জেলাতেই ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৪৭টি ভ্যাকসিন-ভ্যান রয়েছে।
আরও পড়ুন: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, নয়া স্ট্রেনই চিন্তার
প্রতিষেধক নিতে আসা এবং ফিরে যাওয়া— এই গোটা প্রক্রিয়ায় রাস্তায় যাতে কোথাও কোনও কোনও রকম সমস্যা না-হয়, তার জন্যও প্রস্তুত থাকছে রাজ্য প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, বিমানবন্দর থেকে ভ্যাকসিন-ভ্যানকে বাগবাজারে পৌঁছে দেবে পুলিশের পাইলট কার। কলকাতা থেকে জেলায় প্রতিষেধক নিয়ে যাওয়ার সময়েও ভ্যান যাতে রাস্তায় যানজটে ফেঁসে না-যায়, তার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা-সহ যে-সব জায়গার উপর দিয়ে গাড়িটি যাবে, সেখানকার স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকেও আগাম জানানো থাকবে। প্রয়োজনে রাখা হতে পারে পাইলট কারও।