প্রতীকী ছবি।
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ক্রমে দুর্বল হচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যেও সারা দেশের অন্তত ৮৪টি জেলা নিয়ে চিন্তায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িও। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত ২১-২৭ জুনের সপ্তাহে এই জেলায় সংক্রমণের হার ১৩.১৭ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাকেশ ভূষণ জানিয়েছেন, জলপাইগুড়িতে সংক্রমণের হার দ্রুত নীচে নামিয়ে আনতে হবে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় ঢেউয়ের দীর্ঘ সময় জলপাইগুড়িতে সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি। এই নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে এর আগে তৎপর হতেও বলেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। জনস্বাস্থ্য দফতরের উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওএসডি সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘সংক্রমণ রুখতে যে সমস্ত বিধি ঠিক মতো মানা উচিত, তা হচ্ছে না। কনটেনমেন্ট জ়োন ঠিক মতো না করলে সংক্রমণের হার কমানো মুশকিল। জেলা প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’
কিন্তু এই জেলাতেই কেন সংক্রমণের হার এত বেশি? স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রের বক্তব্য, জেলায় কনটেনমেন্ট জ়োন ঠিক মতো মানা হচ্ছে না বলেই তাদের পর্যবেক্ষণ। এর পিছনে নজরদারির অভাব রয়েছে বলেই দাবি। সূত্রের দাবি, এমনও দেখা গিয়েছে, হোমআইসোলেশনে থাকা রোগী এবং তাঁর পরিবারের লোকজন বাইরে ঘোরাফেরা করছেন, চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, রোগীর বাড়ি কনটেনমেন্ট জ়োন এবং সেই বিধি কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাকেশ ভূষণও তাঁর চিঠিতে একই কথা জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, জেলাভিত্তিক নির্দিষ্ট পরিকল্পনা সফল ভাবে বাস্তবায়িত করতে সংক্রমিতদের চিহ্নিতকরণ (কেস ম্যাপিং), ওয়ার্ড ও ব্লকভিত্তিক নজরদারি এবং প্রয়োজনে সংক্রমিত ব্যক্তিদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা, ২৪ ঘন্টা চালু থাকে এমন আপৎকালীন কেন্দ্র খুলতে হবে।
জেলা প্রশাসনের নজরদারির ক্ষেত্রেও খামতি থাকছে বলে মনে করছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও। তাদের মতে, শিলিগুড়িতে ভিন্ জেলা, ভিন্ রাজ্য থেকেও লোক যাতায়াত করছে। তবু সেখানে সংক্রমণের হার এখনও ১০ শতাংশের নীচে। তা হলে জলপাইগুড়ির এই হাল কেন?
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘কোনও এলাকায় যদি একজন আক্রান্তও থেকে থাকেন, ওই এলাকায় ‘মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জ়োন’ তৈরি করে কড়া নজরদারি চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিক বলেন, ‘‘মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জ়োনে কড়াকড়ি, নজরদারি বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’’
দিল্লির বক্তব্য, শুধু জলপাইগুড়িই নয়, দেশের আরও এমন ৮৩টি জেলায় সংক্রণের হার ১০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে সংক্রমণের নিরিখে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি অরুণাচল প্রদেশের। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাজস্থান। কেন্দ্রের বক্তব্য, রাজ্যগুলির উচিত এই জেলাগুলিতে ধাপে ধাপে ৫ শতাংশের নীচে সংক্রমণের হার নামিয়ে নিয়ে যাওয়া। না হলে তৃতীয় ঢেউয়ের সময়ে উদ্বেগ বাড়বে।