রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। ছবি: পিটিআই।
করোনা-আতঙ্কের আবহে এ বার রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। আগামী সোমবার ১৬ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত আপাতত রাজ্যের সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। স্থগিত রাখা হয়েছে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাও।তবে, উচ্চ মাধ্যমিক-সহ সিবিএসই এবং আইএসই-র যে সমস্ত পরীক্ষা চলছে তা চলবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার জানিয়েছেন, আগামী ৩০ মার্চ ফের পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নোভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু), রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং কেন্দ্রীয় সরকার যে পরামর্শ দিয়েছে, তার ভিত্তিতেই রাজ্য সরকার স্কুল-মাদ্রাসা-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনা ছড়িয়ে পড়া রুখতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে জনস্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।
আগামী ১৬ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাজ্য সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং বেসরকারি সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই নির্দেশ অনুযায়ী বন্ধ থাকবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা এই সময় স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে, উচ্চ মাধ্যমিক-সহ সিবিএসই এবং আইসিএসই বোর্ডের যে পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে, সেগুলো নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনেই হবে বলে জানানো হয়েছে ওই নির্দেশিকায়। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, “চিন্তার কোনও কারণ নেই। এ রাজ্যে তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। তবে, আমরা সব রকমের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। সে কথা মাথায় রেখেইস্কুল-মাদ্রাসা-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও বাড়ি থেকে কাজ করতে অনুরোধ করছি।’’
নবান্ন থেকে এই নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: মোদীর ডাকে সাড়া দিয়ে করোনা নিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সে রাজি পাকিস্তান
করোনা-পরিস্থিতিতে এর আগে বিভিন্ন রাজ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দিল্লিতেও বন্ধ রাখা হয়েছে সমস্ত স্কুল-কলেজ। এ রাজ্যের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বা খড়্গপুর আইআইটি-র মতো প্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও সেই পথে হাঁটল। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়: “শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। স্যানিটাইজার বা টিসু দিলেও শিশুরা ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না। অনেক সময়েই ওরা বুঝতে পারে না, ঠিক কী করতে হবে।তাই আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলে এ দিন মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কাশি বা সর্দি হলেই অনেকে মনে করছেন তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।তা কিন্তু মোটেও নয়। সর্দি-কাশি হলেই করোনা, এটা মোটেও ভাববেন না। তবে, জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট থাকলে অবশ্যই চিকিৎসককে দেখান। অযথা আতঙ্কিত হবেন না।”এরই পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, করোনা-পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য সব রকম ভাবে প্রস্তুত। তিনি বলেন, “আমাদের রাজ্য সব রকম পরিস্থিতির মোকাবিলায় তৈরি। হাসপাতালগুলিতে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি রাখা হচ্ছে। আগামী ৩০ মার্চ ফের আমরা বৈঠক করব। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’’
আরও পড়ুন: ইউরোপকে করোনার ভরকেন্দ্র বলছে হু, ভারতীয়দের ফেরাতে ইটালি যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান
করোনা-পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীকে পরামর্শও দিয়েছেন। বলেছেন, “বেশি করে জল খান। ঘণ্টায় ঘণ্টায় হাত ধুতে হবে। অসুস্থবোধ করে ডাক্তার দেখান। আতঙ্কিত হবেন না।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের অনেক বন্ধু দেশ রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলিতে তো যাতায়াত বন্ধ করতে পারিনা। নেপাল, ভুটান বাংলাদেশের সঙ্গেআমাদের সীমান্ত রয়েছে। আমরা সব দিকে নজর রাখছি। যা যা করার করছি।”